জাতিসংঘের পঞ্চম এলডিসি কনফারেন্সের জন্য উচ্চভিলাষী ও রূপান্তরধর্মী এজেন্ডা তৈরির নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ও কানাডা। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রস্তুতিমূলক কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভাটি যৌথভাবে আহ্বান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বব রে।
সম্মেলনটির আয়োজন উপলক্ষে এ বছর অনুষ্ঠিত সভায় দেশ দুটির স্থায়ী প্রতিনিধিদ্বয়কে যৌথ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। উল্লেখ্য স্বল্পোন্নত দেশসমূহের পঞ্চম সম্মেলন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হবে।
২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চম এলডিসি কনফারেন্সটি হবে জাতিসংঘের অন্যতম বৃহৎ সম্মেলন। এই সম্মেলনে এলডিসির পরবর্তী কর্মসূচির জন্য একটি নতুন বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট গৃহীত হবে যা দেশগুলোর আশু ও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত উভয় ধরনের সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সম্মেলনটির কো-চেয়ার হিসেবে টেকসই উত্তরণ ও উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা পদক্ষেপসহ বেশকিছু অগ্রাধিকারমূলক বিষয় এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তাৎপর্যপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য জাতিসংঘ এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে চূড়ান্ত উত্তরণের স্বীকৃতি দেয়।
স্বল্পোন্নত দেশসমূহের বৈশ্বিক সভাপতি হিসেবে মালাওয়ির রাষ্ট্রপতি ম্যাককার্থি চাকওয়েরা ইভেন্টটিতে ভার্চুয়ালভাবে যোগদান করেন এবং কী-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া কী-নোট স্পিকার হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন সম্মেলনটির স্বাগতিক দেশ কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ্ আল-মুরাইখি।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজ্কির, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা জে. মোহাম্মদ, ওইসিডির উন্নয়ন সহায়তা কমিটির সভাপতি মিজ্ সুজানা মুরিহেড এবং জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিজ্ ফেকিতামইলোয়া কাটোয়া উতয়কামানু।
মঙ্গলবার ইভেন্টটির প্রথম সেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বে জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন। কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাবে স্বল্পোন্নত দেশসমূহ যেসব মারাত্মক পরিণতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা উঠে আসে সাধারণ বিতর্ক পর্বের আলোচনায়। এলডিসির দেশসমূহের জন্য আগামী ১০ বছরের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ও অংশীদারত্ব প্রদর্শন করেন বক্তারা।
কোভিড-১৯-এর বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, এখন স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য সর্বোচ্চ প্রাধিকার হচ্ছে কোভিড-১৯ টিকার সহজ ও বাধাহীন প্রাপ্তি। যদি টিকার বিষয়টি এখনই সমাধান করা না হয় তবে সামনের বছরগুলোতে স্বল্পোন্নত দেশসমূহ তীব্র মানবিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে নিপতিত হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরিত ও উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য প্রণোদনাভিত্তিক উত্তরণ প্যাকেজের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। তিনি বলেন, এটি করা না হলে কোভিড-১৯-এর প্রভাব এবং এলডিসি সংশ্লিষ্ট সহায়তা পদক্ষেপের অভাবে দেশগুলোর নিচের ধাপে পিছলে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশসমূহ দারিদ্র্য ও অসমতা, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈদেশিক ঋণ, অভিবাসন ও রেমিট্যান্সবিষয়ক যেসব বহুমুখী চ্যলেঞ্জ ও নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে তা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
কাতারের দোহায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য এলডিসি-৫ সম্মেলনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে প্রস্তুতিমূলক কমিটির এই সপ্তাহব্যাপী সভা প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সভার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সেশনসমূহে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।