কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তি স্থানান্তরসহ জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনতে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার বিকেলে এশিয়া অঞ্চলের কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের মধ্যে গোলটেবিল আলোচনায় এ প্রস্তাব দেন তিনি। বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কপ-২৬ সম্মেলনের আগে আমি কয়েকটি সুস্পষ্ট প্রস্তাব রাখতে চাই। প্রথমত, বিশ্বব্যাপী সবুজ ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসার এবং চক্রাকার অর্থনীতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সুসময় ফিরিয়ে আনা।
‘দ্বিতীয়ত, ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিধান রেখে কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তিতে জোর দেয়া।
তৃতীয়ত, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো যাতে অভিযোজন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জলবায়ু অর্থায়নের সুবিধা পায় সে জন্য তাদের সমর্থন দেয়া।’
এ ছাড়াও গৃহহীন জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন করে জলবায়ুর ঝুঁকি কমানোর প্রস্তাবও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবশেষে আমি সবার কাছে গৃহহীনদের আশ্রয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। এটিই দারিদ্র্য বিমোচন ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য জলবায়ুর ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সাম্প্রতিক করোনা মহামারির বিষয়টিও উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বই এখন একটি ভয়াবহ এবং এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত মহামারি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই মহামারি স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
‘উদাহরণ হিসেবে আমার সরকার জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে নানা নীতি ও ব্যবস্থা নিয়েছে। সর্বশক্তিমান সহায় থাকায় বাংলাদেশ মহামারির ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়ন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।’
এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকির মধ্যে থেকে এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অভিযোজনের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় রয়েছে। প্রতিবছর অভিযোজন ও জলবায়ু সহনশীলতার জন্য আমরা আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করছি।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় আমরা মুজিব জলবায়ু উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বল্প কার্বন নিঃসরণের পথ অনুসরণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ৪০ গিগা ওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ৩০০ কোটি (৩০ মিলিয়ন) গাছের চারা রোপণ করতে যাচ্ছি। আমরা এ বছরের জুনে একটি পরিমিত উচ্চাভিলাষী এনডিসি উপস্থাপন করার আশা করছি।
‘তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ রপ্তানকারক হিসেবে বাংলাদেশ সামগ্রিক চক্রাকার অর্থনীতির অংশ হিসেবে ফ্যাশন এবং টেক্সটাইলে কার্যকর সুযোগ খুঁজছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্লাইমেট ভলনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ারম্যান এবং জিসিএর দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের স্বাগতিক হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ এবং স্থানীয়ভাবে নেয়া অভিযোজনকে তুলে ধরছি।
‘পাশাপাশি নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু সহনশীল ঘরে পুনর্বাসন করছি।’