বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গলায় দা চালানোর পর রক্তাক্ত হাফিজুরের ভিডিও

  •    
  • ২৪ মে, ২০২১ ১৬:৫৬

ঘটনাটি গত ১৫ মের। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এক ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলায় চালান বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। পরে পুলিশও একই বর্ণনা দিয়েছে। সেই ঘটনার পরের একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে ফেসবুকে। এতে তার রক্তাক্ত অবস্থায় বসে থাকা আর পুলিশের রিকশায় তুলে দেয়ার ঘটনাপ্রবাহ ধরা পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্র ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলায় চালিয়েছেন, তার রক্তাক্ত অবস্থার একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে ফেসবুকে।

সেখানে দেখা যয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরা রক্তাক্ত হাফিজুর ফুটপাতে বসে আছেন। হঠাৎ তিনি উঠে দাঁড়ান। গলা থেকে গড়িয়ে পরা রক্তে ভিজে গেছে তার সম্পূর্ণ শরীর।

দেখা যায়, এক পুলিশ সদস্য এসে হাত ধরে হাফিজুরকে তুলে দিচ্ছেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশায়। রিকশাচালককে ইঙ্গিত দিচ্ছেন যেন তাকে সামনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

সেখানে আরও দুইজন পুলিশ উপস্থিত হলেও কেউই হাফিজুরের সঙ্গে রিকশায় উঠেননি। একা হাফিজুরকে নিয়েই ছুটে যায় রিকশা।

ঘটনাটি গত ১৫ মের। কিন্তু এ যে হাফিজুর সেটি জানা ছিল না এতদিন। নয় দিনের মাথায় ২৩ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনরা। রাতেই তারা মরদেহ নিয়ে সমাহিত করে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেছি। পুলিশ তাকে রিকশায় তুলে দিয়েছে। আবার নেমে গেছে। আবার তাকে তোলা হয়েছে।’

দেহটি রাখা ছিল ফ্রিজে। কিন্তু সেই ফ্রিজ নষ্ট। এ কারণে হাফিজুরের মরদেহে দেখা দিয়েছে পচন। তাকে পোকাও ধরেছে।

হাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গত ১৫ মে নিজ বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে বসে রাত প্রায় সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেন। এরপর থেকেই তার কোন সন্ধান পায়নি পরিবার ও স্বজনেরা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নিখোঁজের দিন অর্থাৎ ১৫ তারিখ রাতেই হাফিজুর আত্মহত্যা করেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে এক ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজে কেটেছেন।

তবে কেন তিনি এই কাজ করতে গেলেন, সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কোনো ধারণা করতে পারছেন না কেউ।

গুরুতর আহত অবস্থায় হাফিজুরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাতেই সেখানে তিনি মারা যান। কিন্তু তখন তার পরিচয় জানা ছিল না।

সেখানকার তথ্য বলছে, হাফিজকে হাসপাতালে আনা হয় গত ১৫ মে। তাকে যখন সেখানে নিয়ে আসা হয়, তখন গলা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান সেদিনই।

পরের দিন ১৬ তারিখ রাত ১০টা ২০ মিনিটে শাহবাগ থানার কনস্টেবল সালাউদ্দিন আহমেদ খান এবং উপপরিদর্শক আব্বাস আলী তার মরদেহ মর্গে নিয়ে আসেন। ১৭ তারিখ হাফিজের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।

নিউজবাংলার হাতে আসা সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, হাফিজুরের পরনে ছাই রঙের হাফপ্যান্ট ছিল। গলায় কাটা দাগ ।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

নার্গিস আক্তার নামে এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার, যিনি নিজেকে হাফিজের এই পরিণতির প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেছেন।

নার্গিস বলেন, ‘আমরা ১৫ তারিখ রাতে শহীদ মিনারের পাশে ছিলাম। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ দেখলাম ছেলেটা (হাফিজ) একজন ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা কেটে দেয়। এরপর দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদের বর্ণনাও একই রকম।

তিনি বলেন, ‘১৫ তারিখ সন্ধ্যায় দায়িত্বরত পুলিশ টিম থেকে আমার কাছে একটা ফোন আসে। বলা হয়, হাফপ্যান্ট পরিহিত একটা ছেলে নিজের গলা নিজে কেটে দিয়েছে। আর সে চিৎকার করছে, আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও বলে। পরে আমি ঘটনাস্থলে আসি। এসে দেখি সে দৌড়াচ্ছে। সে শহীদ মিনার থেকে ঢাকা মেডিক্যালের ইমার্জেন্সি গেটের দিকে দৌড়াচ্ছিল।’

ওসি বলেন, ‘আমরা ডাবওয়ালার সাথে কথা বলেছি। সে ডাবওয়ালা আমাদের বলেছে, ছেলেটা হঠাৎ এসে ডাব কাটার দা নিয়ে নিজের গলায় ধরে। ডাবওয়ালা ভেবেছে সে তাকে ভয় দেখাচ্ছে। পরে সত্যি সত্যি গলা কেটে ফেলে।’

ওসি জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াচ্ছেন দেখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের ফটকের কাছে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

কেন হাফিজের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি- এই প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা প্রচুর লাশ আসে। সবার পরিচয় জানা যায় না।’

মানববন্ধন

হাফিজুরের সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন।

এক মানববন্ধনে সহপাঠীরা, হাফিজুরের মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা এটি তারা জানতে চান। যদি আত্মহত্যা হয়ে থাকে তাহলে এর পেছনে কারা জড়িত কারা প্ররোচনা দিয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ‘এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেছি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে।’

এ বিভাগের আরো খবর