করোনাভাইরাস রোধে সরকারের বিধিনিষেধে দীর্ঘ ৪৮ দিন বন্ধ থাকার পর ব্যস্ততা বেড়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচলে। প্রথম দিনে কর্মচঞ্চলতা ফিরে এসেছে রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালীর আন্তজেলা বাস টার্মিনালে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাস ছেড়ে যেতে শুরু করেছে এসব টার্মিনাল থেকে। সকালে টার্মিনাল দুটিতে গিয়ে চোখে পড়ে বাসচালক ও সহকারী এবং সেখানে কর্মরত কর্মীদের ব্যস্ততা। কেউ কেউ হাঁকডাক দিচ্ছেন যাত্রীদের। নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বাস ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে।
দূরপাল্লার বাস চলাচলের প্রধান শর্ত হিসেবে সরকার বলেছে, বাসের কর্মী ও যাত্রীদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মাস্ক পরতে হবে বাধ্যতামূলক হিসেবে।
সরকার নতুন করে লকডাউন বাড়িয়ে রোববার দুপুরে প্রজ্ঞাপন দেয়। প্রজ্ঞাপনে দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দেয়ার পর থেকেই ব্যস্ততা বাড়ে বাসচালক ও সহকারীদের।
যাত্রীদেরও ভিড় বাড়তে থাকে টার্মিনালগুলোতে। গন্তব্যে যেতে অনেকেই অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে ছুটেছিলেন বিকেলেই। সোমবার ভোর থেকে যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যে যাওয়া শুরু করেন।
সোমবার সকাল থেকে ব্যস্ততা দেখা গেছে দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোতে।
যাত্রীরা বাসে ওঠার আগে তাদের হাতে জীবাণুনাশক দেয়া হচ্ছে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
মহাখালী আন্তনগর বাস টার্মিনালের এনা পরিবহনের ম্যানেজার কাজী সুফিয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, সরকারের লকডাউনের শর্ত মেনে দূরপাল্লার বাস চলাচল অব্যাহত থাকবে, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তারা সচেষ্ট থাকবেন।
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে অর্ধেক সিট ফাঁকা রেখই চলাচল শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেয়া ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিয়েই চলছে এনা পরিবহন।
তিনি বলেন, ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এনা পরিবহনের যাত্রী পরিবহন করা হয়। সরকারের সব শর্ত মেনেই চলবে এসব পরিবহন।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও দূরত্ব নিশ্চিত করতে দুই আসনে একজন যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছে বাস। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
এনা পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার এম আতিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক দিন পর দূরপাল্লার পরিবহণ খুলে দিলেও যাত্রী ভিড় তেমন নেই। তবে বেশি যাত্রী আসছে ঢাকার বাইরে থেকে।’
যাত্রী কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেই ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও মানুষ বিভিন্ন উপায়ে গ্রামের বাড়ি গেছেন। আবার অফিস চালু হয়েছে, যথারীতি নানা দুর্ভোগ সয়ে সবাই অফিসে যোগ দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে এখন প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঢাকা ছাড়ছে না।’
রাজধানীর গুলশানের বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক আতিয়ার রহমান প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যেতে চান।
তিনি বলেন, ‘সকাল সকাল এসেছি, ৬০ পারসেন্ট ভাড়া বেশি দিয়ে টিকিট কিনেছি। তবে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে না।’
তবু স্বস্তি ছিল আতিয়ারের চোখেমুখে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় ঈদে মানুষের ভোগান্তি দেখেছি। তাই সে সময় যাইনি, অপেক্ষায় ছিলাম যখন বাস খুলে দেয়া হবে তখন যাব।’
লকডাউনের মধ্যেই দূরপাল্লার বাস খুলে দেয়া হলে যাত্রীরা যাচ্ছেন নিজেদের গন্তব্যে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
মহাখালী বাস টার্মিনালে আলমগীর হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, দাদার মৃত্যুর খবর শুনে আলমগীর হোসেন নওগাঁতে যাচ্ছেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বাস টার্মিনাল এসেছেন। শহি ফতেহ আলী বাসের টিকিট পেয়েছেন। অন্য সময় সাড়ে ৩০০ টাকা ভাড়া হলেও এখন সাড়ে ৭০০ টাকা দিয়ে নওগাঁতে যেতে হচ্ছে আলমগীরকে।
রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে সোমবার সকাল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীদের ভিড় কিছুটা চোখে পড়ার মতো। যারা ঢাকায় ঈদ করেছেন তাদের অনেকেই এখন বাড়ি যাচ্ছেন।
গাবতলী বাস টার্মিনালের জে আর পরিবহনের ম্যানেজার শাকিল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া শর্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার বাস চালু করা হয়েছে। ভোর ছয়টা থেকে বাস চলছে। অনেক যাত্রী আগের দিন টিকিট সংগ্রহ করেছেন। অনেকেই এখন এসে টিকিট নিচ্ছেন।
ঢাকার বাইরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম হলেও টার্মিনালগুলোতে সকালে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে ফিরতি মানুষের ভিড় দেখা গেছে বাসে।
দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হলেও যাত্রী কম থাকায় অলস সময় পার করছেন কাউন্টারের লোকজন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
যারা লকডাউনের মধ্যে নানা দুর্ভোগের মধ্যেই বাড়ি গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই বাস খোলার অপেক্ষায় ছিলেন। দূরপাল্লার বাস খুলে দিয়ে তারা আবার রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন বলে জানান কয়েকজন ঢাকায় ফেরা যাত্রী।
করোনা সংক্রমণ শনাক্ত মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউনে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় বাস-লঞ্চ, ট্রেনসহ সবধরনের দূরপাল্লার যান চলাচল।
৬ মে থেকে অন্তজেলা বাস চলাচলের অনুমতি দিলেও বন্ধই ছিল দূরপাল্লার সব ধরনের পরিবহন।
দূরপাল্লার পরিবহন খুলে দেয়ার দাবিতে বাস মালিক-শ্রমিকরা আন্দোলনও শুরু করেছিলেন।