বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লকডাউনের ১৫ দিনে সড়কে ঝরল ৩২৩ প্রাণ

  •    
  • ২৪ মে, ২০২১ ০২:০৩

ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ৭ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২১ মে পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২টি দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। নৌপথে ৩টি দুর্ঘটনায় ৬জন নিহত ও ১০০ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে যৌথভাবে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছে।

মহাসড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার সকালে নগরীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশের সময় এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারও প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে সড়কে ব্যক্তিগত যান বিশেষ করে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা-ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে।

ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ৭ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২১ মে পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২টি দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। নৌপথে ৩টি দুর্ঘটনায় ৬জন নিহত ও ১০০ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে যৌথভাবে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছে। অথচ দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শিকার করে লকডাউনের মতো কঠিন কর্মসূচী ও বিপুল অর্থ খরচ করে ও বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে একই সময়ে করোনার ভয়াল থাবা প্রতিরোধ করে সংক্রমণে মৃত্যু ৫১৪ জনের মধ্যে সীমিত রাখতে সক্ষম হয়েছে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সমসংখ্যক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা প্রতিরোধে কোনো কর্মসূচী বা অর্থ বরাদ্দের লেশমাত্র ছিল না।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত, ১৯৯ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৫.২৮ শতাংশ, নিহতের ৪৩.০৩ শতাংশ এবং আহতের ৩১.৯৯ শতাংশ প্রায়।

এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১৫১ জন চালক, ৮০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৯ জন পথচারী, ৬৩ জন নারী, ৪৫ জন শিশু, ১৫ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন সাংবাদিক, ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯ জন শিক্ষক, ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৪ জন চিকিৎসক, ২ জন আইনজীবী এবং ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত হয়েছে ১ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন র‌্যাব সদস্য , ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ০২ জন বিজিবি, ৩৫ জন নারী, ৩ জন চিকিৎসক, ২২ জন শিশু , ১৩ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন শিক্ষক, ৯৬ জন চালক, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ১ জন প্রকৌশলী, ৬৯ জন পথচারী, ২ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৬.৯৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৩৭ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১৩.২৪ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৭.৫৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৭.০৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৬.৮৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ও ৫.৯৩ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৪.২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭.১৬ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা, ১৭.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ১০.০৬ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে ও ০.৬২ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৩৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪০.৮৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২২.৩২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.১৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ও মানুষের যাতায়াত অত্যন্ত সীমিত থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের যাতায়াতে এত বেশিসংখ্যক দুর্ঘটনা ও প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে। তিনি সড়ক দুর্ঘটনাকে মহামারি করোনাভাইরাসের মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আব্দুল হক বলেন, গাড়ির ফিটনেস ও অন্যান্য সেবাসমূহ নিতে গিয়ে বিআরটিএ-তে অস্বাভাবিক হয়রানি ও ঘুষবাণিজ্যের শিকার হচ্ছে গাড়ির মালিকরা। ফলে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বাড়ছে, ঘটছে দুর্ঘটনা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফ বলেন, দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে যে যেখানে আছে সেখানে ঈদ করবে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত থাকলেও বাস্তবায়নে নানা জটিলতায় কিছু মানুষের বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত ভোগান্তির পোহাতে হয়েছে। যারা রাস্তায় নেমেছিল তাদের নিরাপদে বাড়ি পৌছাতে সরকারের দায়িত্ব ছিল।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এ বিভাগের আরো খবর