‘দিন আইন্না দিন খাই। বাস বন্ধ আইজ দেড় মাস। খাওনের টেকা নাই। দেড়টা মাস কেমনে গেছে আল্লাই ভাল জানে।’
৫৫ দিন পর দূরপাল্লার বাস চালু হবে শুনে উচ্ছ্বসিত পরিবহন শ্রমিক মো. রনি। কিন্তু ভুলতে পারছেন না কর্মহীন সময়ের কষ্টের কথা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ৫ এপ্রিল থেকেই বসে আছেন তিনি। ২৪ মে শেষ হচ্ছে তার কর্ম আর আয়হীনতার দুঃসহ জীবন।
আগের দিন রোববার রনিকে পাওয়া গেল রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বাসের শ্রমিক নন। তবে বাস মেরামতের কাজ করেন।
দুপুরে টার্মিনালে দিয়ে দেখা যায়, বাস ধোয়ামোছার কাজে ব্যস্ত তিনি। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বসে থাকা বাসগুলোর যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছিল। কোনো যন্ত্রপাতির সমস্যা থাকলে টুকটাক মেরামত, ইঞ্জিন অয়েল পাল্টানো, যন্ত্রাংশে গ্রিজ দেয়ার কাজে দিনভর ছিল ব্যস্ততা।
লিমন মিয়া ঢাকা-জামালপুর রুটে চলা রাজীব পরিবহনে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ঢাকায় সাততলা বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন স্ত্রীসহ।
বাসে কাজ বন্ধ থাকায় সংসারের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। খরচ চালাতে ঋণ করতে হয়েছে তার।
লিমন বলেন, ‘বউ মাইনষের ঘরে কাম করে। করোনায় হেরও কাম কমছে। হের একলার ইনকামে আর কয়দিন চলন যায়। ধার কইরা চলতে অইছে এই কয়দিন। এহন গাড়ি চললে কয়ডা টেহা আইব।’
প্রস্তুত করা হচ্ছে বাস
এতদিন ধরে পরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে যে অলসতা ছিল, তা ভেঙে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দেয়ায় খুশি পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। তারা বলছেন, গত ৫ এপ্রিল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তারা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রোজগারের পথ। আবার গাড়ি চলার নির্দেশনায় উচ্ছ্বাস ফিরেছে তাদের মধ্যে।
রাজীব পরিবহনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন গাড়িগুলো বসা থাকায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবার চেক করা হচ্ছে। কোথাও কিছু পরিবর্তন করা লাগলে তা করা হচ্ছে।’
একতা পরিবহনের চালক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের তো আর কোনো আয়ের পথ নাই। গাড়ি বন্ধ তো আয় বন্ধ। সংসারের খরচ চালাইতে পারতাছিলাম না। যেভাবেই হোক গাড়ি চলুক। গাড়ি বন্ধ করে দিলে আমাদের পেটে লাথি পড়ে।’
দূরপাল্লার বাস বন্ধ হওয়ায় শুধু পরিবহন শ্রমিক-মালিক নয়, টার্মিনালের দোকানি থেকে শুরু করে মুচি, ভিক্ষুক সবাই বিপাকে পড়েছিলেন। কারণ, বাস চললেই টার্মিনালে যাত্রীদের যাতায়াত থাকে, রোজগার হয় তাদের।
দেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে দূরপাল্লার সব ধরনের বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ করে দেয়া হয়। অবশ্য ঈদের আগে ৬ মে জেলার অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য বাসসহ কিছু পরিবহন খুলে দেয়া হলেও লঞ্চ এবং ট্রেন বন্ধই রাখা হয়।
৩ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ৬ মে থেকে জেলার ভেতরে গণপরিবহন খুলে দেয়া হলেও বন্ধ রাখা হয় দূরপাল্লার সব গাড়ি।
বাস মালিকদের চার নির্দেশনা
স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের জন্য চারটি নির্দেশনা দিযেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সংগঠনটির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাক্ষরিত নির্দেশনাগুলো হলো:
১. মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী গাড়িতে তোলা যাবে না। চালক, সুপারভাইজার/কন্ডাক্টর, হেলপার এবং টিকিট বিক্রির কর্মীদেরও মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি/ হ্যান্ড সেনিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
২. গাড়িতে আসনের অর্ধেক যাত্রী বহন করতে হবে। বর্তমান ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ বেশি আদায় করা যাবে।
৩. যাত্রার শুরু ও শেষে গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
এবং
৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়া মেনে চলতে হবে।