প্রথমে লকডাউন, এরপর কঠোর লকডাউন।
তবে ধীরে ধীরে দেয়া হতে থাকে ছাড়। প্রথমে ছাড় তিন চাকার পরিবহনে। পরে প্রাইভেট কার চলেছে দেদার।
ধাপে ধাপে লকডাউন বাড়তে থাকে, তবে ঈদের আগে কেনাবেচার সুবিধার জন্য খুলে যায় বিপণিবিতান। পরে চালু হয় রাজধানী আর জেলার ভেতরে বাস। তবে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধই থাকে।
তবে অষ্টমবারের মতো লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর আদেশ জারি করে রোববার জানানো হয়, সোমবার থেকে আন্তজেলা পরিবহনও চালু হয়ে যাচ্ছে। বাস, ট্রেন আর লঞ্চ যাত্রী বহনে প্রস্তুতি পুরোপুরি।
সোমবার সকাল থেকে যাত্রী উঠবে ট্রেনে। আগের দিন ধুয়েমুছে সাফ করা হচ্ছে সেগুলো
ফলে কার্যত এখন বিধিনিষেধ কেবল থাকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর গণজমায়েতে।
অবশ্য ছোটখাটো সমাবেশ বিভিন্ন সংগঠন করছে গত দুই সপ্তাহ ধরে। মানববন্ধন, আলোচনা সভাও বন্ধ নেই।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ১৭ মার্চ বন্ধ করে দেয়া হয় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময়ও জানায় সরকার। স্কুল ও কলেজ ২৩ মে আর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার কথা জানানো হয় ২৪ মে।
সাবান-পানি দিয়ে ধোয়া হচ্ছে লঞ্চগুলোও
তবে মার্চের শুরু থেকে করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে চলায় সে পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। আগে বিশেষ বিবেচনায় কওমি মাদ্রাসা চালুর সুযোগ করে দেয়া হলেও সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয় এবার।
শিক্ষাঙ্গন কবে আবার মুখর হবে, সে বিষয়ে আভাস-ইঙ্গিত এখনও দেয়া হয়নি।
১৪ মাস ধরে চলা ছুটি বাড়ানো হয়েছে আগামী ২৯ মে পর্যন্ত।
সরকার জানিয়েছে, ছুটির সময়টাতে নিজেদের ও অন্যদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করবে। পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এখন যেসব বিধিনিষেধ
৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন দিয়ে যেসব বিধিনিষেধ দেয়া হয়, তাতে বলা হয়, জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।
সেটি এখনও বহাল আছে।
বাস, ট্রেন, লঞ্চগুলো ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলবে- এই নির্দেশনাও বহাল। যাত্রী, চালক-সহকারী সবাইকে পরতে হবে মাস্ক। অবশ্য কেবল গণপরিবহন নয়, মাস্ক পরতে হবে ঘরের বাইরে আসা সবাইকেই।
বিপণিবিতান চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভোক্তারা এখন থেকে বসে খেতে পারবেন। তবে সেখানেও ধারণক্ষমতার অর্ধেক মানুষ বসতে পারবে। অবশ্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই খাবার দোকানগুলোতে বসে খাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল।
রাস্তায় নামার আগে আন্তজেলা রুটে চলা বাসগুলো টুকটাক মেরামত করা হচ্ছে
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেই কাজ এগিয়ে নিতে হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস নির্মূল করা খুব কঠিন কাজ। ভ্যাকসিন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা হয়তো কিছুটা সহজ হবে। যারা ভ্যাকসিন পায়নি তারা ঝুঁকির মধ্যে আছে। সাবধানে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো মুহূর্তে সরকারের এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ বেড়ে গেলে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের জীবন রক্ষায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। সারা বিশ্ব তা-ই করছে।’
তিনি জানান, সিটি করপোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকাগুলোতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।