স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
তিনি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ সাত ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
তাই কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তাকে সরাসরি স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা হবে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু।
মিঠু বলেন, ‘ও (রোজিনা) দীর্ঘদিন ধরে সাত ধরনের রোগে ভুগছে। সেগুলোর চিকিৎসা চলছে। আমরা বারবার বলেছি, ও অসুস্থ। কিন্তু অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন যে, ও নাটক করছে।
‘হাইপার টেনশন, থাইরয়েড, ভিটামিন ডি ঘাটতি, কার্ডিয়াক, গ্যাস, ব্লাড প্রেসার, সুগার সমস্যায় ভুগছেন রোজিনা। তার স্বামী মিঠু জানান, স্কয়ারে নেয়ার পর তাকে আইসোলেশনে রাখা হবে। আজই ওর কোভিড টেস্ট করে ফলাফল দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে রোববার বিকেল ৪টার পর বের হন রোজিনা। গাড়িতে ওঠার আগে সাংবাদিকসহ শুভানুধ্যায়ীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি।
স্কয়ার হাসপাতালে পৌঁছেছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। ছবি: নিউজবাংলামুক্তির পর সাংবাদিকদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় রোজিনা বলেন, ‘আমি অবশ্যই সাংবাদিকতা করব।’
ওই সময় তার মুক্তিতে ভূমিকা রাখা সাংবাদিক ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে রোববার বেলা ১১টার দিকে রোজিনাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশ দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল বাকি।
আদালতে জামিন শুনানির সময় রোজিনা যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে অনুরোধ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
এমন অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক রোজিনাকে পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে মুচলেকা ও পাসপোর্ট জমা দেয়ার শর্তে জামিন দেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রোজিনার পাসপোর্ট আদালতে জমা দেন তার স্বামী মনিরুল হক মিঠু।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোজিনা একাধিক গুরুতর রোগে আক্রান্ত ও অসুস্থ। আমি কারাগারে খবর নিয়েছি, রোজিনা খুব অসুস্থ। আজকের মধ্যেই ছাড়া না পেলে ও মারাও যেতে পারে।’
রোজিনা ইসলাম ১৭ মে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন সেখানকার কর্মকর্তারা। রাতে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী।
মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, এই গণমাধ্যমকর্মী রাষ্ট্রীয় কিছু গোপন নথি সরিয়েছেন; কিছু নথির ছবি তুলেছেন। এগুলো প্রকাশ হলে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারত। নথিগুলো ছিল টিকা ক্রয়-সংক্রান্ত।
অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকা ক্রয়সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এর খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজ চলছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত পত্র ও ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। সেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত।
রোজিনার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে দণ্ডবিধির অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩-এর ৩ ও ৫ ধারায়। সেখানে তার বিরুদ্ধে সরকারি নথি সরানো ও ছবি তোলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুরু থেকেই রোজিনাকে মুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল সাংবাদিক সংগঠনগুলো। সাংবাদিক নেতারা রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি চাইছিলেন।