করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ মোকাবিলায় চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হলেও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে খুলে দেয়া হয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন।
তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো মুহূর্তে এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রোববার লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের জীবনরক্ষায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। সারা বিশ্বে তা-ই করছে।’
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেই কাজ এগিয়ে নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘(করোনাভাইরাস) নির্মূল করা খুব কঠিন কাজ। ভ্যাকসিন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা হয়তো কিছুটা সহজ হবে। যারা ভ্যাকসিন পায়নি তারা ঝুঁকির মধ্যে আছে। সাবধানে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।’
লকডাউন বা চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
আন্তজেলা পরিবহন চালু করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। এটি আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গাড়ি বন্ধ থাকার কারণে কাজকর্মে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। তাই সার্বিক বিবেচনা করে এক সপ্তাহের জন্য আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অনেক দিন ধরে আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তো এভাবে সব বন্ধ রাখা যায় না। আমাদের অর্থনীতির কথা চিন্তা করতে হবে, জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করতে হবে, মানুষের আয়-উপার্জনের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।
‘তবে এ ক্ষেত্রে সবাই যেন শতভাগ মাস্ক পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’
হোটেল, রেস্তোরাঁগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসনে সেবা দিতে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
এ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আর সে জন্যই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি।
‘সে ক্ষেত্রে এই দুটো ডিসিশন আমাদের দরকার ছিল। তবে আমাদের করোনার প্রকোপ বুঝেই সিদ্ধান্তগুলো আসবে। সে ক্ষেত্রে আপাতত এক সপ্তাহের জন্য আমরা এই সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করেছি।’
সবাইকে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান ফরহাদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আমরা প্রশাসনিক নির্দেশনা দেব। যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে যেন মাস্ক পরার প্রবণতা আরও বাড়ানো যায়, সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড আমাদের থাকবে।’
জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে সরকার জোর দিচ্ছে বলেও জানান তিনি। বলেন, করোনা মোকাবিলা করতে হবে সচেতন হয়ে।
রেস্তোরাঁ ও আন্তজেলা গণপরিবহন ছাড়া বাকি সবকিছুতে আগের নিয়ম বহাল থাকবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যে বিধিনিষেধগুলো ৫ মে দেয়া হয়, সব বহাল থাকবে।’
৫ মে প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে
দোকানপাট ও শপিং মলগুলো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সব দোকানপাট ও শপিং মলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দোকানপাট ও শপিং মল তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে।
মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকাগুলোতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা নেবে।