বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধুর বিশ্ববন্ধু হওয়ার দিন

  •    
  • ২৩ মে, ২০২১ ০০:২০

বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক লাভের কারণে সেই সময় সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্বীকৃতি পাওয়া সহজ হয়। রোববার সেই স্বীকৃতির ৪৮তম বার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ।

বাঙালি জাতির মুক্তির কান্ডারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। এটিই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিবিদের পাওয়া প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান ও স্বীকৃতি।

বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক লাভের কারণে সেই সময় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্বীকৃতি পাওয়া সহজ হয়। রোববার সেই স্বীকৃতির ৪৮তম বার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ।

প্রায় দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসন শেষে ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিত্বের ভিত্তিতে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পাকিস্তান। পাকিস্তান গঠনে বাঙালি রাজনীতিবিদেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও পরবর্তী নানা সময়ে তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়া ছিল তারই অংশ। সে সময় বাঙালির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু।পরবর্তীতে ছেষট্টির ছয় দফা বা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে আসে ১৯৭০ এর নির্বাচন। এতে জনরায় আসে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের দিকে। কিন্তু তা উপেক্ষা করে ক্ষমতা হস্তান্তরে গরিমসি শুরু করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের বাঙালি জাতিকে চূড়ান্ত মুক্তি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বলে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

২৫ মার্চ রাত ১২টার পর পাকিস্তানি জান্তা সরকার গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধুকে। এর আগেই অবশ্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। ডাক দেন সশস্ত্র সংগ্রামের। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ বেয়ে আসে স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। পরে কোটি বাঙালির দাবি ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হন বঙ্গবন্ধু। ওই বছরের ১০ জানুয়ারি মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন তিনি।দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনের পাশাপাশি শুরু করেন বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ। এ সময় উপমহাদেশে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ভেতর সৎ প্রতিবেশীমূলক সম্পর্ক স্থাপন ও শান্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।

ভারত-সোভিয়েত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি ১৯৭১-এর পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি ১৯৭২ এর মাধ্যমে উপমহাদেশে শান্তি স্থাপনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুর জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ এবং শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ বাংলাদেশকে বিশ্ব সভায় একটি ন্যায়ানুগ দেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। সকলের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন জাতির জনক।এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষ মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিব দেশগুলোকে সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।’

এমনই এক প্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বাঙালির মুক্তি আন্দোলন ও বিশ্বশান্তিতে অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানে তার নাম প্রস্তাব করেন পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র। বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালের মে মাসে ঢাকায় দুদিনের এক সম্মেলন আয়োজন করে বিশ্ব শান্তি পরিষদ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পরিষদের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৩ মে জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের সমাবেশে পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদান করেন। এ সময় রমেশ চন্দ্র বলেন, ‘শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’

বঙ্গবন্ধু ছাড়াও জুলিও কুরি শান্তি পদক লাভ করেন ফিদেল ক্যাস্ট্রো, হো চি মিন, ইয়াসির আরাফাত, সালভেদর আলেন্দে, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা, পাবলো নেরুদা, জওহরলাল নেহেরু, মার্টিন লুথার কিং, নিওনিদ ব্রেজনেভসহ অনেক বিশ্বনেতা।পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৫ অক্টোবর গণভবনে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এতে বঙ্গবন্ধু এ পদক মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। তিনি সেদিন বলেছিলেন, বিশ্ব শান্তি পরিষদের জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার শুধু তার একার নয়। যে লাখো শহীদের রক্তে বাংলাদেশ স্বাধীন, এ সম্মান তাদের দেওয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর