সরকারি তথ্য চুরির অভিযোগে কারাগারে থাকা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ঘটনাকে পুঁজি করে দেশবিরোধী মহল ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
কারও কর্মকাণ্ড যেন সেই মহলের হতে অস্ত্র তুলে দেয়ার মতো না হয়, সেদিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে মন্ত্রী তার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে টিভি নাটক পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিক রোজিনার ঘটনাকে পুঁজি করে দেশবিরোধী চিহ্নিত মহল ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে, কারো কর্মকাণ্ড যেন তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার মতো না হয়।’
রোজিনার ঘটনাকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে এবং দেশবিরোধী মহল এটি নিয়ে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
শনিবার দুপুরে টিভি নাটক পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের নবনির্বাচিত কমিটি তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ছবি: নিউজবাংলা
১৭ মে রোজিনা ইসলাম সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন সেখানকার কর্মকর্তারা। ওই সময় তাকে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। রোজিনাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তার জামিন শুনানি শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আদালত রোববার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ফিলিস্তিনে নারী-শিশুসহ শত শত প্রাণহানি ঘটার পর বিবৃতি দিতে অনেক দিন সময় লাগালেও বিচারাধীন রোজিনা ইস্যুতে পরদিনই বক্তব্য দিয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, দেশবিরোধী বিভিন্ন চক্র যারা বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, কুৎসা রটায়, মিথ্যা অপপ্রচার চালায়, তাদেরও সক্রিয় হতে দেখা গেছে।
‘খালেদা জিয়ার সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মুশফিক ফজল জাতিসংঘ মহাসচিবের দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গিয়ে একটি প্রশ্ন করে এক কর্মকর্তার কাছে থেকে সর্বজনীন গণমাধ্যমবিষয়ক একটি জবাব আদায় করেছে। সেই বক্তব্যকেই রোজিনার বিষয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টার চলছে। জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তার বক্তব্য আর জাতিসংঘের উদ্বেগ এক নয়।’
‘মন্ত্রী, সচিব বা রোজিনা ইসলাম কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন’ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের কোনো কর্মকাণ্ডকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে দেশবিরোধীরা যাতে দেশের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনার স্বামীর ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতা এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অতীতে রোজিনার এ ধরনের ঘটনার প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেটি আমি সামাজিক ও গণমাধ্যমে দেখেছি, তবে যেহেতু তদন্ত চলছে, তদন্তেই সেগুলো বেরিয়ে আসবে।’
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবের দেয়া বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি যখন রোজিনা ইস্যুতে বক্তব্য দিতে থাকে, তখন বুঝতে হবে, এটিকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার অপচেষ্টা চলছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শিক্ষা উপমন্ত্রীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, মতের অমিল হলেই কাউকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা কখনোই সমীচীন নয়।
পরে মন্ত্রী বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রোজিনার বিষয়টি আবেগতাড়িতভাবে না দেখে বাস্তবতার নিরিখে দেখার আহ্বান জানান।
বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. আবদুল মজিদ, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলমসহ অন্য নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।