যশোরের অভয়নগর থানার চিলিশিয়া (পালপাড়া) এলাকায় আলোচিত দেবাশীষ সরকার ওরফে সঞ্জয় হত্যা ও ডাকাতির ঘটনায় করা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে দুই আসামি।
যশোর বিচারিক হাকিমের আদালতে শুক্রবার সন্ধ্যায় জবানবন্দি দেন আসামি সেলিম খাঁ ওরফে শহিদুল খাঁ ও নান্টু শেখ। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
পিবিআই ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইউসুফ হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি সেলিম খাঁকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ওইদিন সকালে আসামি নান্টু শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শুক্রবার তাদের আদালতে নেয়া হয়।
পিবিআই জানিয়েছে, আসামিদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৬ ভরি ৭ আনা ৮ পয়েন্ট (৭৫.১৮ গ্রাম) সোনা উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ২৬ এপ্রিল রাত আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে সাত থেকে আটজনের একটি দল বসতঘরে ঢুকে দেবাশীষ, তার স্ত্রী রিপা, মেয়ে দেবীকা ও মা মিনতী সরকারকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে ডাকাতি করে। ডাকাতির সময় দেবাশীষের ঘরে থাকা চার লাখ টাকা ও ২০ ভরি ৮ আনা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় ডাকাতরা।
খবর পেয়ে আশেপাশের লোকজন দেবাশীষ সরকার ও রিপাকে ভ্যানে করে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক দেবাশীষ সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন। রিপার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দেবীকা ও মিনতীকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ঘটনায় দেবাশীষের ভগ্নিপতি আইনজীবী তপন কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনের নামে অভয়নগর থানায় মামলা করেন।
মামলাটি অভয়নগর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরে মামলাটি নিজেদের উদ্যোগে তদন্তের দায়িত্ব নেয় পিবিআই।
সংস্থাটি জানায়, পিবিআই যশোর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিনের সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) দেবাশীষ মন্ডল মামলাটি তদন্ত শুরু করেন।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নান্টু শেখ স্বর্ণের কাজ জানেন। তার মাধ্যমে লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার গলিয়ে খুলনার হেলাতলা এলাকায় ‘রিংকু স্টোর’ নামের স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করা হয়।
পিবিআই যশোর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রেশমা শারমিন বলেন, সঞ্জয়কে হত্যাসহ তার বসতঘরে ডাকাতির ঘটনার পর পিবিআই, যশোর মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের উদ্দেশ্যে ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। বৃহস্পতিবার মামলাটির তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) দেবাশীষ মণ্ডলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি জানান, তদন্তকালে গত বৃহস্পতিবার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সেলিম খাঁকে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার কাছ থেকে একটি স্বর্ণের আংটি উদ্ধার করা হয়। তিনি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করেন। আসামিরা লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার আসামি নান্টু শেখের মাধ্যমে বিক্রয় করে।