সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার জব্দ তালিকায় নেই করোনার টিকা সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির নথি। এতে রয়েছে জেনেভা মিশনের অ্যাম্বাসেডরের একটি ডিও লেটার, করোনা মোকাবেলায় ব্যবহৃত চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের ৫৬ পাতার একটি প্রস্তাব, টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সারাংশ, দুটি মোবাইল ফোন এবং পিআইডি কার্ড।
শাহবাগ থানায় করা মামলার জব্দ তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, রোজিনার কাছ থেকে উদ্ধার আলামতগুলো জব্দ করা হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। যদিও তাকে আটকে রাখা হয় বিকেল থেকে। এসব কাগজপত্র সরাসরি রোজিনার কাছ থেকে উদ্ধার দেখানো হয়নি জব্দ তালিকায়।
এতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসার উপস্থাপনা অনুযায়ী আলামতগুলো জব্দ করেছে পুলিশ। এর আগে আলামতগুলো কাজী জেবুন্নেসা নিজে রোজিনা ইসলামকে তল্লাশি করে পেয়েছেন।
সোমবার সচিবালয়ে এক কর্মকর্তার কক্ষে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ রাখার পর প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী।
মামলায় রোজিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নথি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোজিনাকে গ্রেপ্তারের পরদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, রোজিনা ইসলাম ভ্যাকসিন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির নথি সরাচ্ছিলেন।
মামলার এজাহারের মধ্যেও টিকা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির তথ্য চুরির অভিযোগ রয়েছে। তবে জব্দ তালিকায় থাকা কাগজপত্র কোনো চুক্তি সংক্রান্ত নয়।
মামলার এজাহার ও জব্দ তালিকা সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ বলে দাবি করছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে। আর যদি এজাহার অনুযায়ী রোজিনা ইসলাম চুরি করে থাকেন তাহলে ওই নথি যে কর্মকর্তার কাছে ছিল তার প্রধান আসামি হওয়ার কথা। কিন্তু শুধুমাত্র রোজিনা ইসলামকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
জব্দ তালিকা সাত ধরনের আলামত সংগ্রহের কথা আছে। তালিকার প্রথমে রয়েছে, জেনেভার বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের অ্যাম্বাসেডরের দুই পাতার একটি ডিও লেটার। দ্বিতীয় আলামত, করোনা মহামারি মোকাবিলায় ব্যবহৃত চিকিৎসা সামগ্রী ও সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের পক্ষে সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর জন্য পরিচালক সিএমএসডির পাঠানো চিঠি (৫৬ পাতা)।
তৃতীয় আলামত, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য সারসংক্ষেপ (দুই পাতা)। চতুর্থ আলামত, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ কমিটির অনুমোদিত সারসংক্ষেপের ফটোকপি (দুই পাতা)।
পঞ্চম আলামত একটি স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোন ও ষষ্ঠ আলামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে একটি আইফোন। সপ্তম আলামতে রয়েছে, দুটি পিআইডি কার্ড।
মামলার এজাহার ও জব্দ তালিকার ত্রুটি তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘প্রথমে বলা হয়েছে এটা খসড়া। তার মানে এটি এখনও ফাইলিং হয়নি। নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু নন-ডিসক্লোজার কোনো অ্যাগ্রিমেন্ট কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এখনও হয়নি। বলা হচ্ছে, অন্য দেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকবে না, সেটি তো এখনও হয়ই নাই।’
তিনি বলেন, ‘এগুলো শুধু পেলেই হবে না, এগুলো বিদেশি এজেন্টের কাছে পাচার করতে হবে, সেরকম কোনো অভিযোগও কিন্তু এজাহারে নেই। বলা হচ্ছে, অত্যন্ত শালীনভাবে চেক করা হয়েছে। শালীন ও অশালীন নয় উনারা কোনোভাবে চেক করতে পারেন না।’
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট করা হয়েছে সরকারি আমলাদের এবং কর্মচারীদের জন্য, সাংবাদিকদের জন্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘তারপর আসি ওই তথ্যগুলোর বিষয়ে। যদি ধরেও নেই এই তথ্যগুলো পাচার হয়ে গেলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানতে পারে, তা হলে এখানে প্রধান আসামি হবেন স্বাস্থ্য সচিব বা যে অফিসারের দায়িত্ব ছিল সেই অফিসার।’
তিনি আরও জানান, এ ধরনের মামলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো রায় হয়নি, কোনো সাজা হয়নি। পাশের দেশ ভারতে এরকম কিছু কেস হয়েছে যেগুলো রিজেক্ট করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাহলে বোঝা যায় এ ধরনের বিষয়গুলো সাংবাদিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়।’
ইশরাত হাসান আরও বলেন, ‘কোনো সাংবাদিক যদি দুর্নীতির কোনো তথ্য পান সেটা দুদকে জমা দিতে পারেন। এরকম হলে বরং ওই সাংবাদিককে নিরাপত্তা এবং তাকে পুরস্কার দেয়ার জন্য নতুন আইন রয়েছে।’