সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিজ্ঞাপনের সমালোচনার পাশাপাশি ব্রিটিশ আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে এক মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা এ দাবি জানান। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) আয়োজনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সিনিয়র সাংবাদিক বিজেসির ট্রাস্টি ও জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘রোজিনার গলায় হাত, বাংলাদেশের জনগণের ওপর দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদের কালো হাত। রোজিনার গলায় হাত, রাষ্ট্রের মালিকের ওপর চাকরের হাত। আমরা সেই হাতের শাস্তি চাই। এই মুহূর্তে রোজিনাকে মুক্ত দেখতে চাই।
‘আমরা বেদনার সাথে দেখলাম বাংলাদেশের সচিবালয়, যেটি হতে পারত দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ জায়গা, সেটি একটি টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে। সেখানে আমলাতান্ত্রিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন একজন নারী। আমরা মনে করি, এটি হেফাজতে নির্যাতন। এটি ফৌজদারি অপরাধ।’
এ সময় তিনি মানবাধিকর কমিশনকে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে ঘটনার তদন্তের দাবি জানান। সুপ্রিম কোর্টের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।’
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে যেভাবে নির্যাতন ও নাজেহাল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের স্বাধীন সংবাদপত্র, গণমাধ্যম এবং গণতনন্ত্রের যে প্রতিশ্রুতি, সেটি লাঞ্ছিত হয়েছে, সেটি ভূপাতিত হয়েছে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের নাম ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ প্রশাসনে যারা এই অপকর্ম করেছেন, তাদের বিচার অবিলম্বে শুরু হবে, এই আশা করব। এখানে আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে।’
নাগরিক টিভির হেড অফ নিউজ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা দীপ আজাদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে কোনো কালা কানুন থাকতে পারে না। আর যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ক্ষমতায়, তখন কালাকানুন থাকবে, সেটা কখনই আশা করি না। আমরা মনে করি, জনপ্রতিনিধিত্ব নয়, আমলাদের রক্ষা করার জন্যই এই কালাকানুনগুলোকে এভাবে জিইয়ে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের টাকায় জনগণের বিরুদ্ধে যখন অত্যাচার চলে, অপপ্রচার চলে তা কখনই হতে দেয়া যায় না। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেটি দেশের মানুষের কল্যাণে খরচ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি আজ খরচ হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে।
‘একজন নারী সাংবাদিক, যিনি দেশের প্রথম সারির একজন কলম সৈনিক, তাকে অপমান-অপদস্থ করার জন্যই এটি করা হয়েছে। সাংবাদিক সমাজকে অপদস্থ করার জন্য জনগণের করের টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।’
মানববন্ধনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, সারা দেশে যখন রোজিনার ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ উত্তাল, সেই মুহূর্তে জনগণের অর্থের অপচয় করে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে। এটি সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগের সঙ্গে বড় অন্তরায়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সহসভাপতি নজরুল কবীর বলেন, ‘এই অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট কখনোই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না বলে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এক অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীই ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাহলে তার সরকারের একজন কর্মকর্তা কি করে সেই আইনে মামলা করতে পারেন?
‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব, আসলেই আপনার সরকারের ভেতরে যারা আছে, তারা সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকদের দূরুত্ব সৃষ্টির কাজ করছে। যেই কর্মকর্তারা মামলাটি করেছেন, তারা যেই নির্যাতন-নিপীড়ন করেছেন, বিজ্ঞাপন দিয়ে যে মিথ্যাচার করেছেন, তা প্রত্যাহার করতে হবে।
‘আমি মনে করি, আগে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ সরকারি প্রজাতন্ত্রের আইন অনুযায়ী তারা যে শপথ দিয়েছেন তা তারা ভঙ্গ করেছেন।’
বিজেসির সদস্যসচিব ও একাত্তর টিভির বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ বলেন, ‘১৯২৩ সালের যে আইনটি আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে রইল, সেই আইনটি কেন আমরা এত বছরেও দূর করতে পারলাম না! কারণ হচ্ছে, আমাদের যা কিছু সংকট, আমরা সাংবাদিকরা এক গলায় এক হয়ে এক সুরে তা বলছি না। সে কারণেই বারবার রোজিনারা গ্রেপ্তার হচ্ছে। আমাদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। আমরা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান করছি না। সে কারণেই আমরা বলছি আমরা এক হই। এসব কালাকানুন দূর করতে সঙ্ঘবদ্ধ হই। আমরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) রোজিনাকে মুক্ত দেখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি শারমিন রিনভী, সাধারণ সম্পাদক এম রাশেদুল ইসলামসহ অনেকে।