বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আনিসুলের কান্নায় তসলিমার কটাক্ষ

  •    
  • ১৯ মে, ২০২১ ২৩:২৪

আনিসুলের কান্না প্রসঙ্গে তসলিমা বলেন, ‘লেখক আনিসুল হককে হাপুস নয়নে কাঁদতেও দেখা গেল। সহকর্মীর জন্য কেঁদেছেন। এক কাগজে রোজিনা ইসলাম আর আনিসুল হক-দুজনই লেখেন কিনা। আনিসুল হক আর আমিও কিন্তু একসময় এক কাগজে লিখতাম। সাপ্তাহিক পূর্বাভাসে। পত্রিকা অফিসে আমাদের দেখাও হতো, আড্ডাও হতো। আমার ওপর যখন অন্যায়ভাবে অত্যাচার করল সরকার, আমাকে দেশ থেকে তাড়াল, ২৭ বছর আমাকে দেশে ফিরতে দিল না তখন কী করেছিলেন তিনি?’

সরকারি নথি চুরির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জন্য তার সহকর্মী আনিসুল হকের কান্নায় কটাক্ষ করেছেন তসলিমা নাসরিন। নির্বাসিত এই লেখিকা নিজের জন্যও প্রথম আলোর এ সহযোগী সম্পাদকের কাছ থেকে এমন কান্না প্রত্যাশা করেছেন।

সচিবালয়ে সোমবার এক কর্মকর্তার কক্ষে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ রাখার পর রোজিনার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। মামলায় রোজিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নথি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

পর দিন তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় রোজিনাকে পাঁচ দিনের জন্য রিমান্ডে পেতে আবেদন করেছিল পুলিশ। শুনানি শেষে এই আবেদন নাকচ করে দেন বিচারক মোহাম্মদ জসীম।

জামিন আবেদন করেছিলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। এই আবেদন আংশিক শুনানি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন বিচারক। রোজিনাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে।

রোজিনার জামিন না হওয়ার খবর শুনে আদালত প্রাঙ্গণে বসেই কেঁদে ফেলেন তার সহকর্মী আনিসুল হক। তার কান্নার বেশ কিছু ছবি ও একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে ট্রল করছেন অনেকে।

বিষয়টি নজরে এসেছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে আন্দোলনের মুখে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া তসলিমা নাসরিনের।

আনিসুলের কান্নাকে কটাক্ষ করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন তসলিমা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় দেয়া এই স্ট্যাটাসে রোজিনা ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের একহাত নিয়েছেন তিনি।

তসলিমা লিখেছেন, ‘কে বলেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে না? খুব জানে। এই যে রোজিনা নামের এক সাংবাদিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকেরা হেনস্তা করল, এর প্রতিবাদ করতে তো ঝাঁপিয়ে পড়েছে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, যদু মধু রাম শ্যাম সকলে।’

আনিসুলের কান্না প্রসঙ্গে তসলিমা বলেন, ‘লেখক আনিসুল হককে হাপুস নয়নে কাঁদতেও দেখা গেল। সহকর্মীর জন্য কেঁদেছেন। এক কাগজে রোজিনা ইসলাম আর আনিসুল হক-দুজনই লেখেন কিনা। আনিসুল হক আর আমিও কিন্তু একসময় এক কাগজে লিখতাম। সাপ্তাহিক পূর্বাভাসে। পত্রিকা অফিসে আমাদের দেখাও হতো, আড্ডাও হতো। আমার ওপর যখন অন্যায়ভাবে অত্যাচার করল সরকার, আমাকে দেশ থেকে তাড়াল, ২৭ বছর আমাকে দেশে ফিরতে দিল না তখন কী করেছিলেন তিনি?

‘এমন অবিশ্বাস্য ভয়াবহ অত্যাচারের কথা জেনেও তিনি কিন্তু আমার জন্য চোখের জল ফেলেননি। হয়তো আমার সঙ্গে সেই হৃদ্যতা ছিল না, যে হৃদ্যতা রোজিনার সঙ্গে আছে। কিন্তু আমার নামটিও একবার কোথাও উচ্চারণ করেছেন বলে শুনিনি। শুষ্ক চোখেও তো কোনোদিন কোথাও দায়সারাভাবেও বলেননি যে, একজন লেখকের ওপর সরকার অন্যায় করছে।’

তসলিমা নাসরিন

আনিসুলের কান্না প্রসঙ্গে তসলিমা আরও বলেন, ‘তাহলে আনিসুল হকের চোখের জলের পেছনে ব্যক্তিগত হৃদ্যতা আছে, মানবতা নেই। মানবতা থাকলে সব অত্যাচারিতের জন্য কাঁদতেন, অথবা নিদেনপক্ষে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন।

‘শুধু আনিসুল হক কেন, বাংলাদেশের কোনো শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী তো প্রশ্ন করেন না, সরকার কেন আমাকে দেশে প্রবেশ করতে দেয় না। প্রতিবাদ যে তারা করতে জানেন না, অথবা করতে ভয় পান এমন তো নয়।’

দেশে ফিরতে কারও সহায়তা না পাওয়া প্রসঙ্গে তসলিমা বলেন, ‘আমাকে কেউ কেউ বলেছেন, “দেশ নষ্ট হয়ে গেছে, ওই দেশে গেলে অত্যাচার করবে, না যাওয়াই ভালো।” ঠিক এভাবে রোজিনাকে কিন্তু কেউ বলেননি, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নষ্ট হয়ে গেছে, ওখানে গেলে অত্যাচার করবে, না যাওয়াই ভালো।” বরং তারা মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার, এবং অত্যাচারিত না হওয়ার অধিকার দাবি করছেন। প্রতিবাদে কাজও হয়েছে, অন্যায় যারা করেছেন, তাদের বদলি করে দেয়া হয়েছে।’

তসলিমা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমার নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য লাগে দেশের একটি ভয়াবহ অন্যায় নিয়ে ২৭ বছর মানুষ কী করে চুপ করে আছে। অথচ ক্ষুদ্র কিছু অন্যায় নিয়ে চিৎকার করে বেশ গলা ফাটায়। আসলে সরকার আমাকে নির্ভাবনায় নির্যাতন করছে, কারণ জানে দেশের বুদ্ধিজীবীরা অন্য যেকোনো নির্যাতন নিয়ে মুখ খুললেও এই নির্যাতনটি নিয়ে মুখ খুলবে না।’

‘বেছে বেছে প্রতিবাদ যারা করে, তাদের ধিক্কার জানাই’-বলেন তসলিমা নাসরিন।

এ বিভাগের আরো খবর