প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে এবার আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের মধ্যে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে করোনাকালীন দ্বিতীয় পর্যায়ের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশ্বাস দেন।
তবে রোজিনা ইসলামের বিষয়টি সাংবাদিকদের আবেগতাড়িতভাবে না দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেহেতু একটি মামলা হয়েছে, তার যাতে সুবিচার হয়, তিনি যাতে ন্যায় বিচার পান, তার প্রতি কোনোভাবে যাতে অন্যায় না হয়, সেটি আমরা দেখছি। সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। প্রধানমন্ত্রী ও আমি সাংবাদিকদের মান মর্যাদা ও সম্মান রক্ষায় আন্তরিক ও বদ্ধপরিকর।’
মন্ত্রণালয়ে অবরুদ্ধ করার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর শাহবাগ থানায় এনে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে সোমবার রাতে রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মামলায় বাদী করা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানীকে। দণ্ডবিধি ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
গোপন নথি পাচার অন্যায় উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় গোপন নথি বা অন্য দেশের সাথে চুক্তি, যেগুলো বাইরে প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে চুক্তিতে আছে বা সেই দেশের অনুরোধ আছে, সেগুলো কখনও বাইরে প্রকাশ করতে পারি না। সেটি সংরক্ষণ করা যেকোনো মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে গোপন নথি পাচার অন্যায়।’
পুলিশ হেফাজতে রোজিনা সম্মান যাতে রক্ষা হয় এবং কারা হেফাজতে তিনি যাতে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পান এ বিষয়ে বারবার স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সেটি যাতে নিশ্চিত করা হয় আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারও কোনো দায় থাকলে সেটিও নিশ্চয় বের হয়ে আসবে।’
অবরুদ্ধ করে রোজিনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনা ইসলামকে নিয়ে কী ঘটনা ঘটেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেগুলো বাইরে প্রকাশ করা যাবে না, এমন নথি রোজিনা ইসলাম ফাইল থেকে নিয়ে তার পকেটসহ অন্যান্য জায়গায় রেখেছিলেন এবং কিছু ছবি তুলেছিলেন। তখন তাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তিনি কাগজগুলো ফেরত দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এখানে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি রোজিনা ইসলাম ফাইল থেকে নিয়েছেন, সেজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখানে প্রশ্ন হচ্ছে তিনি সেখানে পাঁচ ঘণ্টা আটক থাকলেন কেন? এটি নিয়ে সবার মধ্যে প্রশ্ন আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখেননি, এক ঘণ্টা পরেই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। যে বিলম্বটা হয়েছে সেটি কেন হলো পুলিশ খুঁজে বের করবে।
‘এ নিয়ে মামলা হয়েছে, বিষয়টা তদন্তাধীন আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির মাধ্যমে নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে তাকে সেখানে কেউ হেনস্তা করেছিল কিনা? রোজিনা ইসলামের কী অপরাধ ছিল, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারও কোনো অপরাধ আছে কিনা বেরিয়ে আসবে। পুলিশও তদন্ত করছে।’
হাছান মাহমুদ এও বলেন, ফিলিস্তিনে শত শত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, প্রায় এক শর কাছাকাছি শিশুকে হত্যা করা হলো, সেটি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি বিবৃতি দিল না। রোজিনা ইসলাম কেন পাঁচ ঘণ্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে থাকলেন, সেটি নিয়ে বিবৃতি দিয়ে দিল। আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন আছে, যেগুলো ফিলিস্তিনে এত অন্যায় হচ্ছে সেটি নিয়ে বিবৃতি দেয়নি। এমনকি জাতিসংঘও কথা বলতে সাত দিন সময় নিয়েছে। কিন্তু রোজিনা ইসলামের বিষয় নিয়ে অনেকেই কথা বলেছে।
তিনি বলেন, সুতরাং সাংবাদিক বন্ধুদের অনুরোধ জানাব, সরকারের ওপর আস্থা রাখুন, এ ক্ষেত্রে সরকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। কিন্তু কেউ অন্যায় করলে, নিয়ম-নীতির যদি কেউ তোয়াক্কা না করে, সে ক্ষেত্রে যাতে সেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় সে ব্যাপারে নিশ্চয় সাংবাদিক সমাজ একমত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে তথ্য কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনের মাধ্যমে যে কেউ যেকোনো তথ্য সরকারের কাছে চাইতে পারে। তথ্য কমিশনের মাধ্যমে শুধু সে তথ্যই তিনি পাবেন না যেটা নন-ডিসক্লোজার আইটেম। এ ক্ষেত্রে গোপন নথি পাচার অন্যায়।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন বলে এর আগে মন্তব্য করেছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী।