বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মানুষ জানে না, তাই চুলায় হাঁড়ি ওঠে’

  •    
  • ১৯ মে, ২০২১ ১৮:২৫

রোববার জাতীয় চিরিয়াখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশদ্বার বন্ধ। দুজন গার্ড ভেতরে বসে আছেন। গেটের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে চিড়িয়াখানা।’

রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় গত পাঁচ মাস ধরে দর্শনার্থীর প্রবেশ বন্ধ।

বিষয়টি না জানায় অনেকেই এসে ফেরত যাচ্ছেন মন খারাপ করে। তবে এই না জানাটাই যেন আবার মন ভালো করে দিচ্ছে কিছু মানুষের। চিড়িয়াখানাকে কেন্দ্র করে থাকা ছোট ব্যবসায়ীদের ঘরে চুলায় হাঁড়ি চড়ে এই মন খারাপ করে ফিরে যাওয়া মানুষদের কল্যাণে।

রোববার জাতীয় চিরিয়াখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশদ্বার বন্ধ। দুজন গার্ড ভেতরে বসে আছেন। গেটের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে চিড়িয়াখানা।’

তবে চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকলেও গেটের সামনে নিয়মিত বসেছে অস্থায়ী মেলা। রয়েছে ফুচকার স্টল, আইস গোলার ভ্যান, বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে নানান রকম আয়োজন।

আরেকদিকে চলছে বিনোদনমূলক নানান ধরনের গেইমস।

চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের কেউ কেউ সে সব গেইমে অংশ নিচ্ছেন।

ফুচকার দোকানগুলোতেও বিকালের দিকে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। যেহেতু এসেই পড়েছেন, তাই বিকল্প উপায়ে প্রিয়জনদের আনন্দ দেয়ার চেষ্টা থাকে সবার মধ্যে।

চিড়িয়াখানায় ঢুকতে না পারায় অনেক শিশুকেই কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। তাদের কান্না থামানোর জন্য মা-বাবার নানা রকম চেষ্টার মধ্যে একটি হলো খেলনা কিনে দেয়া।

এমনি এক বাবার কাছে খেলনা বিক্রি করতে করতে বিক্রতা সানাউল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দোকান তো লাগাই (খোলা) না। চিড়িয়াখানা বন্ধ, মানুষ নাই। তয় ঈদের লাইগা অনেকেই আইতাছে। তাই পরশু থে লাগাইছি। আর দুদিন লাগামু, তারপরে বন্ধ। না জাইনাই বেশি মানুষ আসে। আইসা দেহে বন্ধ। কষ্ট কইরা আইছে তাই বাইরের ঘুরাঘুরি করে কতক্ষণ। জিনিস অল্প সল্প বেচা বিক্রি হয়।’

‘মানুষ জানে না, তাই ঘরে চাল আসে। চুলা জ্বলে। বুঝেন নাই?’

সানাউল্লাহর মতো আরও অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে। যাদের আয়ের প্রধান উৎস চিড়িয়াখানার দর্শনার্থী।

গত বছর থেকে দফায় দফায় দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে চিড়িয়াখানা। গত বছরের ২০ মার্চ বন্ধ হয়ে সাত মাস পর খুলে দেয়া হলেও আবারও করোনা সংক্রমণের জন্য তা বন্ধ করে দেয়া হয়। গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে এই বিনোদন কেন্দ্রটি।

এতে করে জীবনজীবিকায় পরিবর্তন এসেছে চিড়িয়াখানাকে কেন্দ্র করে রোজগার করা মানুষগুলোর। বিকল্প চেষ্টা করলেও মূল রোজগারের জায়গা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

ফুচকা বিক্রেতা আলামিন হোসেন বলেন, ‘বাড়িত্তে টাকা আইনা ফুচকার ভ্যান দিছি। এইহানে নানা লোক ধইরা দোকানটা দিছিলাম। গত বছর থিকা বন্ধ আছ, এই খুলে এই বন্ধ, তয় বন্ধই বেশি আছিল। বন্ধের সময় আশপাশের এলাকায় বসায় দোকান। কিন্তু এইহানে যে লাভ হয়ত সেটা আর হয় না।

‘বাড়িতে আগে যে টেকা পাঠাইতাম, এখন আরও বেশি দেওন লাগে। তয় আয় তো আগের মতন আর হয় না, আরও কম হয় উলটা। তবে গত তিনদিনে বিশেষ কইরা ঈদের দিন ভালোই লাভ হইছে। মানুষ আইতাছে, যাইতাছে। দূর থিকা আসে, ভাবে আসছে যখন কিছু খাইয়া যাই। আমারও বেচা হয়। মেলাদিন পর ঈদের এই কয়দিন ভালো বেচা হইতাছে আর কি।’

অস্থায়ী দোকানের বাইরেও হাতে করে নানান সব জিনিস ফেরি করে বেড়ান অনেকে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ময়ুরের পেখম। চিড়িয়াখানা যাবে আর ফেরার পথে একটি করে ময়ুরের পেখম নিয়ে আসবে না। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় কপালে হাত পড়েছে পেখম বিক্রেতা গাজীর।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, আগে অন্য কাজ করতাম। হাতে সমস্যা হওয়াতে এই ব্যবসায় শুরু করি। দৈনিক আমার যা ইনকাম আছিল। তাতে আর কষ্ট থাকার কথা আছিল না। কিন্তু গত বছর থিকা কপালডাই খারাপ যাইতাছে। দোকানে গিয়া প্রত্যেক দিন জিগাই চিড়িয়াখানা কি খুলছে? কয় মার্কেট খুলছে, গাড়ি খুলছে। চিড়িয়াখানা আর খুলে না।

পাশাপাশি কী করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তো করার মত আছেই এইডা। মহল্লায় মহল্লায় ফেরি করি। আট দশটা যা বেচতে পারি আর কি।

এদিকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানায় এসে যখন দেখেন বন্ধ, খানিকটা বিরক্ত হলেও অন্তত খাওয়ার জায়গা সেই সঙ্গে বাচ্চাদের কিনে দেয়ার মতো খেলনাসামগ্রী রয়েছে বলে খানিকটা স্বস্তিবোধ করেন।

চিড়িয়াখানার বাঘ, হরিণের সঙ্গে ছবি না হোক, অন্তত আদরের সন্তানকে পছন্দ করে খেলনা, বেলুন, মুখোশ কিনে দিচ্ছেন আগ্রহ নিয়ে। বন্ধুরা এসে ফুচকার দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন উচ্ছ্বাস নিয়ে।

ছোট মেয়ে আর বোনকে নিয়ে রায়ের বাজার থেকে এসেছেন সাব্বির মোল্লা। নিউজবাংলাক তিনি বলেন, জানতাম না তো যে বন্ধ। শখ করে নিয়ে আসলাম। আসলামই যখন এত দূর থেকে। তাই ভাবলাম বাইরেই কিছুক্ষণ বসি। বোনরে ফুচকা আর আইসক্রিম খাওয়াইলাম। মেয়েটারে হাতি কিনে দিলাম। কিছু একটা নিয়া যাক আর কি।

এ বিভাগের আরো খবর