অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে উদ্বেগের বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক মঙ্গলবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।
দুজারিক বলেন, ‘…বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিককে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। এটি অবশ্যই এমন একটি বিষয় যাতে আমরা নজর দিচ্ছি। এটি উদ্বেগের বিষয়।
‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাংবাদিকদের হয়রানি বা শারীরিক আঘাতের হুমকিমুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে এবং এটি বাংলাদেশসহ সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘মহামারির সময়ে আমরা বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি এবং তারা যেখানেই কাজ করুন না কেন, তা অব্যাহত রাখতে দিতে হবে।’
রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে করা মামলায় মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদন নাকচ করে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
এর আগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে বেলা ১১টার দিকে নেয়া হয় রোজিনাকে। শুনানি শেষে তাকে কারাগারে আটকে রাখার আদেশ দেন বিচারক মোহাম্মদ জসিম।
বিচারক বৃহস্পতিবার তার জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য তারিখ দেন।
রোজিনা ইসলাম সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন সেখানকার কর্মকর্তারা। রাতে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, এই গণমাধ্যমকর্মী রাষ্ট্রীয় কিছু গোপন নথি সরিয়েছেন; কিছু নথির ছবি তুলেছেন। এগুলো প্রকাশ হলে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারত। নথিগুলো ছিল টিকা ক্রয়-সংক্রান্ত।
অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকা ক্রয়-সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এর খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট প্রণয়নকাজ চলছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত পত্র ও ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। সেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত।
মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় বলা হয়, বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে ঢোকেন। তখন একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। সে সময় রোজিনা দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানোর পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন।
ওই সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে রোজিনাকে বাধা দেন। আর নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে তিনি ওই কক্ষে কী করছেন, তা জানতে চান। এ সময় রোজিনা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন।
অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে রোজিনার কাছ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র এবং নথির ছবি সংবলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।
এরপর রাত ৯টার দিকে রোজিনাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১১টার পর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।