পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা এবং রাতে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে যেভাবে নথি চুরির মামলা দেয়া হয়েছে তা শিষ্টাচারবহির্ভূত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরার শামিল বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে টিআইবি। অবিলম্বে রোজিনার নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহার এবং তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে বিবেচনাবোধের পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানায় টিআইবি।
সংস্থাটি বলছে, করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের ক্রয় থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতির যে ভয়াল ও অমানবিক চিত্র জাতির সামনে এসেছে, তার অনেকটাই সম্ভব হয়েছে রোজিনা ইসলামের মতো অকুতোভয় সাংবাদিকদের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার কারণে। এ সময় এমন ঘটনা মুক্ত সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরারই নামান্তর।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয়হীনতা, পেশাদারত্বের যে ঘাটতি ও স্বরূপ রোজিনা ইসলামের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে, এটাকে তারই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করাই স্বাভাবিক।
‘এখন পর্যন্ত যারা কিছুটা হলেও নীতি ও নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতা করছেন, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে নিয়মিত জনস্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছেন, এটা তাদের জন্য দুর্নীতিবাজদের পক্ষ থেকে একটি হুঁশিয়ারি বার্তা বলে মনে করি। এর রেশ আমাদের ধারণারও বাইরে।’
এ ঘটনায় যেভাবে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার বিষয়কে টেনে এনে ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩ এর ৩ ও ৫ ধারা এবং পেনাল কোডের ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় মামলা করা হয়েছে, এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে রোজিনা ইসলামের সাংবাদিক পরিচয়কে কোনোভাবেই বিবেচনা করা হয়নি, বরং তাকে ফাঁদে ফেলে শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে পুরো গণমাধ্যমকেই একহাত নেয়ার অপচেষ্টা করেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।’
অন্যদিকে আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমরাই পারি জোট নিন্দা প্রকাশ করে বলেছে, ‘আমরাই পারি জোট মনে করে, এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় একজন নারীর জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিক পেশায় টিকে থাকা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। রোজিনা ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক। যার কাজ এবং বলিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতা দান করেছে।
‘কোনো প্রকার বিচারিক প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগে সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় তার ওপর এই ধরনের নিপীড়ন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার এহেন আচরণ রাষ্ট্রের স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির এক ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।’