সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ভ্যাকসিন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির নথি সরাচ্ছিলেন বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে মঙ্গলবার রোজিনা ইস্যু নিয়ে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন দাবি করেন।
ওই সংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘চুক্তিতে কি এমন কিছু আছে যাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়ে যাবে?’
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি যখন ডিসক্লোজার ডকুমেন্ট সই করেন, সেটাকে যদি ভঙ্গ করেন, তাহলে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হবে না? আপনি ভায়োলেট করলেন।
‘ওই চুক্তির ভিত্তিতেই তো আপনাকে ভ্যাকসিন দেবে। সেই চুক্তি ভায়োলেট করলে তো আপনি ভ্যাকসিন পাবেন না। আমরা জনগণকে ভ্যাকসিন দিতে পারব না।’
রোজিনা ইসলাম সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন সেখানকার কর্মকর্তারা। ওই সময় তাকে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা।
সোমবার রাতে রোজিনাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এই গণমাধ্যমকর্মী রাষ্ট্রীয় কিছু গোপন নথি সরিয়েছেন; কিছু নথির ছবি তুলেছেন। এগুলো প্রকাশ হলে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারত। নথিগুলো ছিল টিকা ক্রয়-সংক্রান্ত।
‘নির্যাতন করা হয়নি’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শারীরিকভাবে (রোজিনাকে) কোনো নির্যাতন বা আঘাত এটা কিন্তু করা হয় নাই। তাকে নির্যাতন করা হয়েছে এ কথাটা সঠিক নয়। একজন অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি, দুইজন ডেপুটি সেক্রেটারি মহিলা ওখানে ছিলেন। তার সাথে প্রাথমিকভাবে ডিল করেছে।
‘…এখন পরবর্তী সময়ে পুলিশকে বলা হয়েছে। তারপরে এই ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে ঘটেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা আপনাদের সাথে কোঅপারেট করে কাজ করছি। আমার দরজার সামনেই সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে যায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আপনাদের সাথে কথা বলি। যেখানে আপনারা দিয়েছেন আমরা সেখানেই কথা বলি। আমার পক্ষে যতটুক নেয়া সম্ভব রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ মেনে আমি সবটুকুই বলি।’
সচিবালয়ের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘সচিবালয়ে ঢুকে রাষ্ট্রীয় এই নথি নেয়ার প্রয়োজন ছিল না। ওখানে ঢোকারও কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমি এতটুকু জানি…ওখানে কেউ উপস্থিতি ছিল না। বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে যতটুকু শুনেছি এতটুকুই জানি।’
মন্ত্রী দাবি করেন, বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিবেদনের জন্য রোজিনা গ্রেপ্তার হননি।
‘ঘটনাটার উপরে কথা বলতে হবে। সরকারি ডকুমেন্টস নিয়ে যাচ্ছে। ফাইন, শুধু নিয়ে যাচ্ছে। ছবি তুলছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি টিকা সংক্রান্ত ছিল। ট্রেড লেভেলে আমরা কমিটমেন্ট দিয়েছি এটা কোনো জায়গায় আমরা প্রকাশ করব না। সেগুলো যদি কেউ প্রকাশ করে তাহলে আমরা কী করতে পারি?’
অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা মামলায় রোজিনা ইসলামকে জামিনে নেয়ার আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
রোজিনা ইসলামের দাবি, তিনি অন্যায় আক্রোশের শিকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে কক্ষে ঘটনা ঘটছে সেখানে রাষ্ট্রীয় ফাইল রাখা আছে।
‘আমি যতদূর জানি ওই রুমে আর কেউ ছিল না তখন। রুমটা খালি পড়ে ছিল। খালি রুমের মধ্যে উনি ঢুকছেন। কেউ যদি অন্যায় করে সেটা সামনে বের হয়ে আসবে।’
‘অন্যায় হলে ব্যবস্থা’
রোজিনার সঙ্গে কোনো অন্যায় করা হলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, অন্যায়ের ব্যবস্থা আমরা নেব।’
‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব সিনিয়র সাংবাদিককে গলা চেপে ধরতে আমরা ভিডিওতে দেখেছি। এ বিষয়ে আপনারা ব্যবস্থা নেবেন কি না?’
এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ‘অতিরিক্ত সচিবের কাছে আমি শুনেছি। তিনি বলেছেন আমি তাকে শারীরিকভাবে কোনো নির্যাতন করিনি বরং তিনি (রোজিনা) আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন।
‘তিনি (অতিরিক্ত সচিব) আরও জানান, আমি যখন তাকে আটকাতে চেষ্টা করেছি তখন আমাকে থাপ্পড় দিয়েছেন; আমার গায়ে খামচি দিয়েছেন। ওটাকে আটকাবার চেষ্টা করেছি। তার পরে তো পুলিশ চলে আসে। ঘণ্টার মধ্যে এরপর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কোনো নির্দোষ লোক সাজা পাক এটা আমরা চাই না। পরবর্তী সময়ে বাহাস হলে সত্য বের হয়ে আসবে।’
দীর্ঘ সময় রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৯ ঘণ্টা বা ৫ ঘণ্টা আটকায় রাখিনি। আধা ঘণ্টা আটকে রেখে পুলিশের হাতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
‘এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও জানেন। তাকে আটকে রেখে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে বলে আমার জানা নাই।’