রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম কোনো অন্যায় করেননি বলে তার ভাইয়ের মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন।
মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে রাত সোয়া দুইটায় শাহবাগ থানায় যান তার ভাই সেলিম। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে বের হয়ে এসে তিনি কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে।
সেলিম বলেন, ‘ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছে। …ও এ কথাটাই বলেছে, আমি প্রচণ্ড রকম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’
মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ও প্রচণ্ড সাহসী একজন মেয়ে। কিন্তু সচিবালয়ের মধ্যে ওকে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়েছে। ওরে শুধু মারা হয় নাই, ওর বুকের ওপরে ওই অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি এক মহিলা আছে পা চাপা দিয়ে ধরছে, গলা চাপ দিয়ে ধরছে।’
রোজিনার ভাই বলেন, ‘সে (রোজিনা) বারবার বলেছে আমি এমন কোনো অন্যায় করিনি, এমন কোনো অপরাধ করিনি, আমার সাথে সম্পূর্ণ অন্যায় করা হয়েছে, অপরাধ করা হয়েছে। আমি মানসিকভাবে বিপর্যন্ত, আমি আমার বন্ধুদের কাছে সাহায্য কামনা করছি।’
সোমবার বেলা তিনটার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে অবরুদ্ধ হন প্রথম আলোর এই জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরি করেছেন, যেগুলো প্রকাশ হলে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হবে।
রাত ৯টার পরে রোজিনাকে সচিবালয় থেকে নেয়া হয় শাহবাগ থানায়। সেখানে লিপিবদ্ধ করা হয় মামলা।
এই গণমাধ্যমকর্মীকে থানায় নেয়ার পর থেকেই সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা। রাত ৩টার দিকেও তাদের অবস্থান অব্যাহত ছিল।
রোজিনার মুক্তি চেয়ে সোমবার রাতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। ছবি: নিউজবাংলা‘তারা কি আমার পাশে আছে?’
রোজিনার ভাই জানান, তার বোন বারবার জানতে চেয়েছেন সাংবাদিকরা তার পাশে আছেন কি না।
তিনি বলেন, ‘আমাকে এই কথাটি জিজ্ঞেস করছে আমার সাংবাদিক বন্ধুরা কি আমার পাশে আছে? আমার বড় ভায়েরা কি আমার পাশে আছে?’ আমি বলছি, সব সাংবাদিক ভাইয়েরা আছে।
ও বারবার সাহায্য কামনা করছে। ‘আমার এই দুঃসময়ে আমার ভায়েরা, আমার বন্ধুরা যাতে আমার পাশে থাকে।’ ও বারবার এই কথাটাই বলছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের সেলিম বলেন, ‘আমি ওর ভাই হিসেবে বলতে চাই, আপনারা রোজিনার পাশে ছিলেন, পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকবেন।’
হাসপাতালে নেয়া নিয়ে বিরোধ
এর আগে রাত সোয়া ১২টার দিকে হাসপাতাল থেকে গাড়ি প্রস্তুত করা হয় রোজিনাকে হাসপাতালে নিতে।
সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক ও এই গণমাধ্যমকর্মীর পরিবারের সদস্যরা তখন পুলিশকে ঘিরে ধরে জানতে চান কোন হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ বলতে রাজি হচ্ছিল না। এ নিয়ে সেখানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট চলে বাগ্বিতণ্ডা।
এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘নেয়ারই দরকার নাই। এটাও লিখে দেন আপনাদের বাধার কারণে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।’
পরে চাপাচাপির মধ্যে তিনি জানান, রোজিনাকে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হচ্ছে।
তখন রোজিনার বোন সাবিনা পারভেজ জুলি বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল না, নিলে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে নেন বা এখানে ডাক্তার ডেকে এনে চিকিৎসা করান। আমি কাউকে বিশ্বাস করি না, সচিবালয় থেকে বলেছেন, নিচ্ছেন হাসপাতালে। নিয়ে এসেছেন থানায়। এখন আবার কোথায় নিয়ে যাবেন? তার কিছু হলে আপনাদের জবাব দিতে হবে।’
রোজিনার ভাই বলেন, ‘সচিবালয় থেকে যখন ওকে নিয়ে আসা হলো, তখন বলা হয়েছিল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। পরে এখানে নিয়ে আসা হয়। পরে মামলা রুজু হয়। এখন কোন হাসপাতালের কথা বলে আমার কোথায় নিয়ে যায় আমরা এই শঙ্কায় আছি।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেন আপত্তি, সেটিও জানান সেলিম। বলেন, ‘হাসপাতালে কোভিডের সিচুয়েশনটাও একটু খারাপ। আর ওইখানে কোন চিকিৎসা থেকে কোন চিকিৎসা হয়…
‘যেহেতু মামলাটাও অন্য ধরনের মামলা হয়েছে, সে জন্য আমরা চিন্তা করেছি, রোজিনা রাত এখানেই থাকবে। সকালে কোর্টে চলে যাবে, আমরা সবাই কোর্টে যাব।’