রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তিনি আক্রোশের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে প্রথম আলো।
এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগ এনে মামলা ও গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে শাহবাগ থানায় যান দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকটির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইসলাম এই মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট করছিলেন। যার মধ্যে নিয়োগ-সংক্রান্ত দুর্নীতির রিপোর্ট ছিল। আমরা মনে করছি, এতে তিনি মন্ত্রণালয়ের আক্রোশের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।’
সোমবার দুপুরে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হন।
মন্ত্রণালয় অভিযোগ করছে, এই গণমাধ্যমকর্মী রাষ্ট্রীয় কিছু গোপনীয় নথি সরিয়েছেন, কিছু নথির ছবি তুলেছেন। এগুলো প্রকাশ হলে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারত। নথিগুলো ছিল ভ্যাকসিন ক্রয়-সংক্রান্ত।
অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয়-সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এর খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট প্রণয়নকাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত পত্র ও ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় বলা হয়, বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে ঢোকেন। তখন একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। সে সময় রোজিনা ইসলাম দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানোর পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন।
সে সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে রোজিনাকে বাধা দেন। আর নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে তিনি ওই কক্ষে কী করছেন, তা জানতে চান। এ সময় রোজিনা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন।
অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে রোজিনার কাছ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র এবং নথির ছবি-সংবলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।
এরপর রাত ৯টার দিকে রোজিনাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১১টার পর মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর রোজিনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সমাধানের দিকে যাব এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় করা হবে।’
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘রোজিনা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেছেন। এগুলো সরকারকে সাহায্য করে। এটা নিয়ন্ত্রণ করলে দুর্নীতি যারা করে, তারা উৎসাহিত হবে।’
এই গণমাধ্যমকর্মীকে গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে আনিসুল হক বলেন, ‘রোজিনার শিশুসন্তান রয়েছে এবং তার নিজের শারীরিক অবস্থাও ভালো না। তিনি আজ কোভিডের টিকা নিয়েছেন। রাষ্ট্র মানবিক না হলে তার চেয়ে দুঃখজনক কিছু থাকে না।’