স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পাঁচ বছর পর গ্রেপ্তার সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারকে ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের আদালত সোমবার বিকেলে এ নির্দেশ দেয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাব উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, বাবুল আকতারের আইনজীবীরা ডিভিশন-১ পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিল। পরে কারাবিধি অনুযায়ী তাকে ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
তবে বাবুল আকতারের আইনজীবী আরিফুর রহমানের দাবি, আদালত তাকে ডিভিশন-১ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কারাবিধি অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ডিভিশন-১, ডিভিশন-২, ডিভিশন-৩ ক্যাটাগরি অনুযায়ী কারাগারে থাকেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বন্দিরা ডিভিশন-১ ও ২ ক্যাটাগরিতে থাকেন।
বিধি অনুযায়ী, যারা ভালো চরিত্রের অধিকারী ও অনভ্যাসগত অপরাধী, সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে যাদের জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের তারা প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা পাবেন।
তবে নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ বা বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা, সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হলে বা অন্য কাউকে এসব অপরাধ করতে প্ররোচিত বা উত্তেজিত করলে তারা ডিভিশন-১ পাবেন না।
কী কী সুবিধা আছে ডিভিশন-১-এ
বাবুল আকতারের আইনজীবী আরিফুর রহমান জানান, প্রথমত করোনার কারণে বাবুল আকতার আইসোলেশনে থাকবেন। এরপর তিনি যতদিন কারাগারে থাকবেন ডিভিশন পাওয়ায় আলাদা রুমে থাকবেন। সেখানে পত্রিকা পড়তে পারবেন, চাহিদা অনুযায়ী খাবার খেতে পারবেন। চেয়ার-টেবিল পাবেন। খাট এবং মশারিও দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান জানান, যারা ডিভিশন পেয়ে থাকেন তাদের আলাদা রুম বা সেলে রাখা হয়। সেখানে খাট, ভালো বিছানা, টেবিল, চেয়ারসহ কিছু সুবিধা দেয়া হয়। এ ছাড়া তাদের খাবারও সাধারণ বন্দির চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের জন্য একজন করে সহকারী দেয়া হয়। তারা সংশ্লিষ্ট বন্দির প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেন।
এ ছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেয়া খাবার যাচাইবাছাই করে তাদের দিয়ে থাকে কারা কর্তৃপক্ষ।
জেল সুপার বলেন, ‘বাবুল আকতারকে কারা কর্তৃপক্ষ বুঝে পেয়েছে। তবে তার আইনজীবী ডিভিশন পাওয়ার যে কাগজটি এনেছিল সেটি বিধি অনুযায়ী হয়নি। এজন্য আমরা কাগজটি গ্রহণ করিনি। তিনি প্রপার (যথাযথ) ওয়েতে আবেদন দিলে আমরা ডিভিশন সুবিধা দিব।’
এ বিষয়ে বাবুলের আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, ‘ডিভিশনের আদেশ নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। সে সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল আকতার।
হত্যার পর চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে তিনি মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
এ মামলায় সে বছরের ২৬ জুন মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর এই হত্যায় বাবুলের সম্পৃক্ততা নিয়ে গণমাধ্যমে নানা তথ্য উঠে আসে। তবে তদন্ত আর আগায়নি। তবে একপর্যায়ে বাবুল পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অব্যাহতি নিতে তাকে বাধ্য করা হয়।
বাবুল দোষী হলে তাকে গ্রেপ্তার না করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে সে সময়ই প্রশ্ন উঠে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা আর দেয়া হয়নি।
তবে পাঁচ বছর পর এবার ঈদের আগে চমক দেখায় পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই। হঠাৎ বাবুলকে ঢাকা থেকে ডেকে নেয়া হয় চট্টগ্রাম। মিতুর বাবাকেও নেয়া হয়।
পিবিআই বাবুলের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এর পরেই বাবুলকে আসামি করে মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
১২ মে পাঁচলাইশ থানায় করা মামলায় বলা হয়, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে।
সেদিনই বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে রিমান্ডে পাঠান।
এ মামলার আসামি আরও সাতজন। এর মধ্যে দুই নম্বর আসামি মুসাসহ পলাতক রয়েছেন তিনজন। অন্য দুজন হলেন তিন নম্বর আসামি এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়্যা এবং ছয় নম্বর আসামি খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু ওরফে কসাই কালু।