বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকা এখন কূটনৈতিক হাতিয়ার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  •    
  • ১৭ মে, ২০২১ ১৫:৪১

বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা পেতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারি পর্যায়ে জুনের মধ্যে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা পেতে কাজ চলছে। বেসরকারি পর্যায়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও টিকা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক হাতিয়ারে (ডিপ্লোম্যাটিক টুল) পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

টিকা নিয়ে বিশ্ব রাজনীতি ও নিজ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিউজবাংলার কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলো এখন নিজেদের স্বার্থ হাসিলে এই টুলস (টিকা) ব্যবহার করছে। আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে দরাদরি করছে।

‘কিন্তু আমরাও যেকোনো মূল্যে আমাদের স্বার্থ রক্ষা করব। কাউকে অন্যায়ভাবে স্বার্থসিদ্ধি করতে দেবো না।’

তিনি জানান, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট সময়মতো টিকা সরবরাহ করতে না পারায় প্রথম ডোজ নেয়া প্রায় ১৫ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই অন্য উৎস থেকে টিকা পেতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারি পর্যায়ে জুনের মধ্যে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা পেতে কাজ চলছে। বেসরকারি পর্যায়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা আসার কথা বাংলাদেশে। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৭০ লাখ। বাকি টিকা আসা পুরোপুরি অনিশ্চিত।

এমন বাস্তবতায় চীন, রাশিয়াসহ অন্য উৎস থেকে টিকা আনতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। চীন থেকে বাংলাদেশে চার থেকে পাঁচ কোটি ডোজ টিকা আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দেশটির টিকা প্রয়োগ শুরু হবে ২৫ মে থেকে।

টিকাপ্রাপ্তি নিয়ে মোমেন বলেন, ‘জুনের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। ভ্যাকসিন এখন একটি ডিপ্লোম্যাটিক টুল; অনেকটা সুশাসন (গুড গভর্ন্যান্স) ও মানবাধিকারের মতো। পশ্চিমা বিশ্ব এগুলো অবস্থা বুঝে ব্যবহার করে।

‘যাদের তারা দেখতে পারে না, তাদের ধাক্কা দিয়ে বলে মানবাধিকার লঙ্ঘন। আর যাদের সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে একটা কথাও বলে না। এগুলোর সবই শোষণের হাতিয়ার। এখন ভ্যাকসিনও আরেকটা কূটনৈতিক সরঞ্জামে পরিণত হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মুলা দেখাচ্ছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার কাছে প্রচুর ভ্যাকসিন আছে। তারা আমাদের মুলা দেখাচ্ছে। তারা বলছে যে, তাদের কাছে ৬০ মিলিয়ন (৬ কোটি) ভ্যাকসিন আছে। তারা আমাদের দিতে পারবে, কিন্তু দেয় না।

‘আমরা প্রথম যখন তাদের কাছে ভ্যাকসিনের জন্য অ্যাপ্রোচ করি তখন শুনি যে, বাংলাদেশ তাদের তালিকায় নেই। তারা বলে, তোমাদের দেশে তো কোভিডের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের তালিকায় ভারত, ব্রাজিল, স্পেন, ইতালি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এরা আছে। কেননা এদের বেশি লোক মারা যাচ্ছে এবং তারা অনেক বিপদে আছে।’

যুক্তরাষ্ট্র টিকা দিতে গড়িমসি করছে অভিযোগ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকাকে বললাম, আমরা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি। কিন্তু সিরাম সময়মতো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারছে না। সে জন্য প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারছি না। আমরা এখন ঠেকায় পড়েছি।

‘তোমাদের কাছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন আছে। তোমরা আমাদের জরুরি ভিত্তিতে অন্তত দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) ভ্যাকসিন দাও, যাতে আমরা দ্বিতীয় ডোজটা দিতে পারি। এই প্রস্তাবেও তারা গড়িমসি করছে। এখন তারা একটা ফায়দা লোটার চেষ্টা করবে, বিভিন্ন ইস্যুতে দরকষাকষি করবে। কিন্তু আমরা আমাদের স্বার্থের বাইরে যাব না।’

টিকা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতাও তিক্ত বলে জানান মন্ত্রী। তার ভাষ্য, ‘ইংল্যান্ড অনেক খারাপ। তারা কোনো কাজেই নেই; বরং সব জায়গাতেই গণ্ডগোল পাকিয়ে দেয়। তারা আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিনের জন্য ইংল্যান্ডের কাছে আমরা সবার আগে আবেদন করেছি। ভারতের আগেই আমরা আবেদন করি।

‘কিন্তু আমাদের তারা বসিয়ে রাখল। তারা বলল যে, ভারতের কারখানা অনেক বড়। তাদের দেবো, তারা তোমাদের দেবে। তারা আরও বলেছিল, ভারত যেদিন ভ্যাকসিন পাবে, তোমরাও সেদিন পাবে। সে জন্য শুরুতেই ভারত আমাদের ভ্যাকসিন দিয়েছিল।’

মোমেন বলেন, ‘এখন আমরা ইংল্যান্ডের কাছে ভ্যাকসিন চাচ্ছি। তারা বলছে, আমাদের কাছে এখন কিছুই নেই। ভারত মহাকষ্টে আছে, তাদের দিয়ে দিয়েছি। তোমাদের যদি দরকার হয়, তোমরা কিনে নিতে পারো। আমরা কিনে নিতে রাজি হয়েছি। কিন্তু তাদের ভ্যাকসিনের দাম অনেক বেশি; গড়ে ৪০ ডলার করে।

‘তাই এটা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো ব্যবসায়ী আনলে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করব। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এটা দুই দেশের ব্যবসায়ী পর্যায়ের চ্যানেলে আনা হতে পারে।’

ইউরোপের অন্য দেশের টিকা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপের সাতটি দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন বেশি আছে, যা তারা ব্যবহার করছে না। এটা আমরা ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারি।

‘কিন্তু খবর নিয়ে জানতে পারি, ক্রোয়েশিয়ার কাছে মাত্র ১০ হাজার ভ্যাকসিন আছে, অস্ট্রিয়ার কাছে ২০ হাজার আছে আর ডেনমার্কের কাছে ২ লাখ। কিন্তু আমাদের এত কম ভ্যাকসিনে কাজ হবে না। আমাদের এক দিনেই প্রয়োজন কয়েক লাখ।’

চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন চীন আর রাশিয়া থেকেই ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করছি। তবে ওদের কাছ থেকে আগে কিনতে হবে। না কিনলে দেবে না।

‘সেই সঙ্গে তাদের ফর্মুলা নিয়ে নিজেদের এখানে উৎপাদন করতে চাই। আশা করছি, আমরা জুনের মধ্যে ভ্যাকসিন পাব।’

এ বিভাগের আরো খবর