ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মোবাইল চোর সন্দেহে আট বছর বয়সী এক শিশুকে দুই দিন ধরে নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অসুস্থ ওই শিশুকে রোববার দুপুরে উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাসানি গ্রাম থেকে উদ্ধারের পর হাসপতালে ভর্তি করা হয়। শিশুর বাড়িও একই গ্রামে।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম জানান, শিশু নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের খবর পেয়ে পুলিশ জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। শিশুটির নানি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিশু নির্যাতন আইনের ওই মামলায় আসামি করা হবে স্থানীয় যুবক রুবেল, মান্নান, শামীম, রানাসহ কয়েকজনকে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ওই শিশুর পায়ে দড়ি বেঁধে কয়েকজন যুবক তাকে নির্যাতন করছে। শিশুটিও তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করছে।
শিশুটির নানি জানান, ওই শিশুর বাবা মারা গেছেন আট বছর আগে। এরপর তার মা কাজের জন্য বিদেশে চলে যান। শিশু ও তার বোন নানাবাড়িতে ছিল।
গত শনিবার সন্ধ্যায় শিশুটি তার নানার জন্য পাড়ার দোকান থেকে সিগারেট আনতে যায়। কিন্তু অনেকক্ষণ পরও না ফিরলে খোঁজাখুজি শুরু হয়। রাতে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
রোববার সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তার। পরে জানা যায় একই গ্রামের আলীম মিয়ার বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে তাকে।
ওই শিশুর নানি ও মামাসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে যান। তাকে (শিশু) ছেড়ে দিতে যুবকদের অনুরোধ করেন তারা। তখন রুবেলসহ অন্যরা তাদের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনের দাম হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।
টাকা না পেয়ে যুবকরা শিশুটির ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। তারা কারও কথা শুনতে রাজি হননি। পরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শিশুটিকে উদ্ধার করে পাশের আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করে অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা চলছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির নানি অভিযোগ করেন, তার নাতিকে রাতভর বিদ্যুতের শক দেয়া হয়েছে। তার পায়ে দড়ি বেঁধে পশুর মতো নির্যাতন করা হয়।
বাংলাদেশে চোর সন্দেহে নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই ১৩ বছর বয়সী শিশু রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয়।
নির্যাতনের সময় দৃশ্যটি ভিডিওতে ধারণ করে নির্যাতনকারীরা। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে তোলপাড় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ওই বছরের ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মাত্র ১৭ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষে ওই বছরের ৮ নভেম্বর আদালত রায় দেয়।
রায়ে চার আসামির মৃত্যুদণ্ডসহ তিনজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। দুজনকে এক বছর করে সাজার রায় বহাল রাখে উচ্চ আদালত।