রিফাত আহমেদ ধানমন্ডিতে থাকেন। ঈদের আগের দিনই নানা পদের রান্না শুরু করেন তিনি।
তবে ঈদ উদযাপনের আয়োজন এ পর্যন্তই। ঈদের দিন বাসায় কোনো অতিথি ছিল না। দুই ছেলের কোনো বন্ধুও আসেনি। নিজেও প্রতিবারের মতো বিকেলে কারও বাসায় বেড়াতে যাননি।
এ যেন পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নিজেকে গৃহবন্দি রাখা। প্রত্যাশা—ভাইরাস সংক্রমণের উদ্বেগবিহীন এক সুন্দর সময়ের।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘোষণা আসে গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর কেটেছে তিনটি ঈদ। পরপর তিনটি ঈদেই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন রিফাত আহমেদ।
‘এটাই বর্তমান সময়ের চরম বাস্তবতা। আগামীর অনেকগুলো ঈদ প্রিয়জনের সঙ্গে কাটাতে হলে এই কটা দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে দেয়া যাবে না।’
অনেক শিশু সারা দিন ঘরের মধ্যেই সময় কাটায় কোনো না কোনো খেলনা নিয়ে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
রিফাত আহমেদ বলেন, আমাদের স্বশরীরে কারও সামনে উপস্থিত না হয়েও ভাব বিনিময়ের অনেক মাধ্যম এখন রয়েছে। ভিডিও কলে কথা হচ্ছে, একসঙ্গে অনেক মানুষ গল্প করা যাচ্ছে। সমমনাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা যাচ্ছে অনায়াসে। ফলে সাময়িক দূরে থাকার কষ্টটা অনেকাংশের ভার্চুয়াল যোগাযোগ চাপা দেয়া যায়। এই দুঃসময়ে এতটুকু করতেই হবে।
ঢাকা শহরে গৃহবন্দি থেকে ঈদ উদযাপনের এমন চিত্র আরও অনেক পরিবারের। মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিংয়ে থাকা আইটি ব্যবসায়ী নয়ন আলমের পরিবারটিও তেমনি। শিশুকন্যা ও স্ত্রীকে নিয়েই এবারও বাসাতেই ঈদ কাটিয়েছেন তিনি।
‘শুক্রবার সকালে ঈদের নামাজ পড়ে আর বের হইনি। বাসাতেই ছিলাম। কারও বাসায় এই সময়ে যেতে নিজের কাছেই সংকোচ লাগে। আর নিজের বাসায় বাইরে থেকে কেউ এলে ভয় লাগে। এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি।’
তবে বিপরীত চিত্রও রয়েছে। হাতিরঝিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ধানমন্ডি লেক, চন্দ্রিমা উদ্যানের মতো এলাকাগুলো দুপুরের পর থেকেই ছিল লোকেলোকারণ্য। কারও মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা ছিল না।
দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৫ জনের দেহে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ১০২ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪৮ জন। মারা গেছেন ২৬ জন।
ঈদুল ফিতরের আগের সন্ধ্যায় জাতির জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেন। তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে আনন্দঘন পরিবেশে আরও ঈদ করা যাবে।
জামাত হয়েছে মসজিদে
বিপুলসংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৭টায় ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
করোনাভাইরাস মহামারিতে সংক্রমণ রোধে গত বছরের মতো এবারও জাতীয় ঈদগাহে ঈদ জামাত হয়নি।
বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত হয় বেলা পৌনে ১১টায়।