বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফ্যামিলিকে কীভাবে পালব

  •    
  • ১৪ মে, ২০২১ ২০:১৩

‘আমাদেরকে টাকা দেন, না হলে গাড়ি চলতে দেন। সবাই যদি চলতে পারে তবে আমরা কেন পারব না? আমাদের তো বউ পোলাপান আছে। আমার গাড়ি যদি বসে থাকে আমি আমার ফ্যামিলিকে কীভাবে পালব?’

ঈদের আনন্দের লেশ নেই। স্বজনদের বায়না পূরণ করার সঙ্গতি নেই, আসলে সামনে জীবন চালানার মতো কোনো অবলম্বনই নেই।

লকডাউনের কারণে বিধিনিষেধে এখনও যারা ঘরে বসে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো আন্তজেলা বাসের চালক শ্রমিকরা।

ঈদে আনন্দ আয়োজন বা স্বজনদের সঙ্গে সুখ সময় কাটাতে অন্যরা যখন ব্যস্ত, তখন রাজধানীসহ সারা দেশে তারা ব্যস্ত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে।

তারা চাইছেন, জেলার ভেতর বাস চলাচলে যেভাবে সুযোগ দেয়া হয়েছে, একইভাবে যেন আন্তজেলাতেও সুযোগ দেয়া হয়।

ঢাকা মহানগর সড়ক প‌রিবহন শ্র‌মিক ইউ‌নিয়নের ব্যানা‌রের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহন চালুসহ পাঁচ দফা দা‌বি‌তে ঈ‌দের দিন সকাল ১০ থে‌কে বেলা ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি পালন ক‌রেন প‌রিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।

সায়েদাবাদ বাস টা‌র্মিনাল ভব‌নের সাম‌নে পূর্ব‌ নির্ধা‌রিত অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নি‌য়ে শাহজাহান খান বলেন, ‘যেভাবে মানুষ গ্রামে গেছেন, সেভাবে তারা আবার ফিরে আসবেন। তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না। তাই ফিরে আসা যাত্রী‌দের দুর্ভোগ কমাতে কয়েক‌দিনের জন্য হলেও দূরপাল্লার প‌রিবহন চালু করা জরু‌রি।’

গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরুর পরে প্রথমে মহানগরে আর ঈদের আগে জেলার ভেতরে গণপরিবহন চালু হয়। তবে আন্তজেলা রুটে বন্ধ থাকে বাস।

শাজাহান খান প্রথমে গাবতলী ও পরে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে কথা বলেন শ্রমিকদের সঙ্গে।

মহাখালী টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের সামনে দাঁড়িয়ে জীবনের কঠিন বাস্তবতার কথা বলছিলেন দুুই চালক সুমন মিয়া ও মামুন মিয়া

মহাখালীতে সৌখিন পরিবহনের চালক সুমন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩৭ দিন ধরে গাড়ি বন্ধ। ঈদের পর আরও সাত দিন দিবে। শাহজাহান খান তো আমাদের কথাই বলল। এহন মালিকপক্ষ আমাদের সাথে মিলছে। আগে তো কিছু কই নাই। ফেরিতে মানুষ গাদাগাদি করে যাচ্ছে। সেখানে তো করোনা ঢুকতেছে। আমরা মিনতি করলাম আগের মত একসিটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদেরকে চালানোর সুযোগ করে দেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে টাকা দেন, না হলে গাড়ি চলতে দেন। সবাই যদি চলতে পারে তবে আমরা কেন পারব না? আমাদের তো বউ পোলাপান আছে। আমার গাড়ি যদি বসে থাকে আমি আমার ফ্যামিলিকে কীভাবে পালব?’

হতাশার সুরে সুমন বলেন, ‘আমি না হয় একজনের কাছ থেকে চাইয়া ভাত খাইলাম কিন্তু আমার বউ বাচ্চা কীভাবে খাবে? আমারে আমার স্টান্ড এর খিচুড়ি দিয়েছে। কিন্তু আমার পরিবারকে কে দিবে?’

চালকরা বলছেন, জেলার ভেতরে বাস চললে আন্তজেলাতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো সম্ভব

৩৭ দিন কোন আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সীমিত আকারে কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণ দেয়া হয়েছে। এলাকাভিত্তিক দিয়ছে। কিন্তু আমরা তো এমন ত্রাণ চাই না। আমাদেরকে ন্যায্যদামে খাবার দেয়া হোক।’

সুমন বলেন, ‘সরকার তো অনেক ক্ষমতা প্রশাসনকে দিয়েছে। আমাদেরকে গাড়ি চালাতে দেন যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানে তবে ব্যবস্থা নেন।… যদি সরকার মনে করে সব বন্ধ রাখবে তবে সেইভাবে আইন হোক। কিন্তু সবকিছু খোলা আছে শুধু আমরা পথে বসে আছি।’

আরেক চালক মামুন মিয়া বলেন, ‘আমাগো নেতারা কইলো তারা নাকি সরকারের কাছে টাকা চাইছিল। দেয় নাই। শুনছি পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিব, তো দেয় নাই। চাল চাইছি, পাই নাই। আমরা বলছিলাম ১০ টাকা দামে চাল খাইতে চাই দেয় নাই।’

শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে তো শুধু আমাদের আন্দোলন ছিল। এখন মালিকপক্ষ আইসা যোগ দিছে। মালিকগো একটা ধারণা হইছে বিভিন্ন গার্মেন্টেসে টাকা দিছে, তাদেরকে যেন দেয়া হয়।

‘লকডাউন তো ইচ্ছাকৃত দেয়া হয়নি। লকডাউন দিছে সারা দেশের জন্য। আমরা তো বাস্তব পরিস্থিতি দেখতেছি তাতে তো কিছুই মানা হইতেছে না। যারা এখন রাস্তায় চলতেছে আমরা তাদের থেকে ভালো স্বাস্থ্যবিধি মানি।’

শ্রমিকদের জন্য সহায়তা, ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রিসহ পাঁচটি দাবি আছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসে এক সিট থেকে আরেক সিটের দুরত্ব তো ছয় ফিট। যারা সিএনজি বা মাইক্রোবাসে চলে তাদের তো কোনো দূরত্ব নাই। এক সিটে চারজন নিয়ে যাইতেছে। মোটরসাইকেলে তিন জন যাইতেছে। সেইখানে তো স্বাস্থ্যবিধি মানতেছে না।’

তিনিও বলেন, ‘লকডাউন দিলে সবখানে দেন। আমরা এত বড় একটা গোষ্ঠী না খেয়ে আছি। আমরা এও বলেছিলাম একটা তালিকা করেন। সরকারের কাছেও তো আমাদের তালিকা দেয়া আছে। সেই তালিকা দেখে আমাদের টার্মিনালে ন্যায্যমূল্যে আমাদের চাল দিক। মাসে ২০ কেজি চাল চাইছি। তাও পাইনি।’

এর আগে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। সেগুলো হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাস চালু এবং স্বাভাবিক মালামাল নিয়ে পণ্য পরিবহন চলাচলের সুযোগ দেয়া, লকডাউনের কারণে কর্মহীন সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান, মালিকদের সহজ শর্তে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া।

এ বিভাগের আরো খবর