ঈদুল ফিতরের দিনে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন কনস্টেবল মিজান। বাড়ি রংপুরে, দুই মেয়ে স্ত্রী ওখানেই থাকেন। আর তিনি থাকেন মালিবাগে সিআইডির ক্যান্টিন সংলগ্ন ব্যারাকে।
চাকরিজীবনে এমন অনেক ঈদ পরিবার ছাড়া কাটিয়েছেন মিজান, এবারও তাই।
বলছিলেন, ‘দুই মেয়ের জন্য বাড়ি যেতে মন কাঁদে।’
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, এবার পুলিশ সদস্যরা ঈদে ছুটি পাচ্ছেন না। তবে যাদের বাড়ি ঢাকার কাছে, তারা দুয়েকদিনের ছুটি পেয়েছেন। বাকিরা কর্মস্থলেই আছেন।
মিজান বলেন, ‘এখন আর খারাপ লাগে না, সয়ে গেছে। মেয়েরা কল করলে খারাপ লাগে। ওরা বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চায়।’
ঈদের মতো উৎসবের দিনগুলোতেও সড়কে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: নিউজবাংলা
সকালে ৭টা থেকে ডিউটি শুরু হয়েছে মিজানের। অল্প কিছু মুখে দিয়েই ডিউটিতে চলে এসেছেন। ঈদের জামাত পড়েছেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালসংলগ্ন একটি মসজিদে।
দুপুরের খাবার ব্যারাকে ফিরে খাবেন। ডিউটি শেষ ব্যারাকে ফিরতে বাজবে বেলা আড়াইটা। এরপর খাওয়া দাওয়া।
বিকেলের সময়টা কীভাবে কাটবে জানেন না তিনি। তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই।
সড়কে দাঁড়িয়ে সাত ঘণ্টার বেশি সময় দায়িত্ব পালন করার পর আর কোথাও যেতে ইচ্ছে হয় না বলে জানান মিজান।
তার মতো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অধিকাংশ সদস্যের ঈদ করতে হচ্ছে ঢাকায়। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন সাদ্দাম।
তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে একটা ঈদও বাড়িতে করতে পারি নাই। প্রথমদিকে বাড়িতে আম্মা কান্নাকাটি করত। এখন বুঝে গেছে, আমাদের চাকরিটাই এমন।’
প্রায় খালি রাজধানীর সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: নিউজবাংলা
রমনা ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন। চাঁদরাতে তার দায়িত্ব ছিল ঈদ কেনাকাটার ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেটে। ভোর ৪টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফেরেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে আমরা কাজ করি। ঈদে বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারছি না, এটা ঠিক। তবে আমরা দায়িত্বে আছি বলেই, অন্যরা ঠিকভাবে কেনাকাটা থেকে শুরু করে যার যার বাড়িতে যেতে পারছেন। মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছে, এটা ভেবেই আনন্দ পাই।’
গত দুই ঈদের মতো এবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা ঈদের ছুটিতে যেতে পারেননি বলে জানান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) ইফতেখায়রুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কারো ছুটি নেই। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে সবাই যে যার কর্মস্থলে আছি। মানুষের সেবার মাধ্যমেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করছি।’