ঈদ মানে আনন্দ। ৩০ দিন রোজা শেষে এসেছে এ খুশির দিন। কিন্তু করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে রাজধানীবাসীর এ আনন্দ আজ অনেকটাই ম্লান। নেই হাত মেলানো, নেই কোলাকুলি।
করোনা বিধিনিষেধে এবারও ঘরবন্দী ঈদ কাটাচ্ছে রাজধানীবাসী।
স্বাভাবিক সময়ে ঈদের দিন রাজধানীর সড়কের মোড়ে বা চায়ের দোকানে তরুণদের চিরচেনা আড্ডার দৃশ্যও এবার তেমন একটা চোখে পড়েনি। করোনা সংক্রমণের কারণে এবারের ঈদ মোড়ানো নানা বিধিনিষেধে।
সড়কে যে কয়েকটি রিক্সা চলছে তাতে তরুণ-তরুণীদের ঘুরতে দেখা গেলেও সে সংখ্যা একেবারেই কম। রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় ভিড় নেই সে এলাকাগুলোতেও। তবে হাতিরঝিলসহ রাজধানীর উন্মুক্ত বিনোদন স্থানগুলোতে মানুষের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে।
হাতিরঝিলে বেড়াতে আসা লাবনী আক্তার প্রজ্ঞা বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে বের না হলে কি ঈদ হয় নাকি? এজন্যই একটু ঘুরতে বেরিয়েছি। বন্ধুদের বাসায় বড়দের থেকে সালামিও নিয়েছি।’
ঈদের দিন বেলা গড়াতে গড়াতে ভিড় বাড়তে শুরু করে হাতিরঝিলে। ছবি: নিউজবাংলা
টিএসসি-শাহবাগ এলাকাতেও তরুণ-তরুণীদের রিক্সায় চেপে ঘুরতে দেখা যায়। এদের একজন রায়হান আল মোস্তফা বলেন, ‘অন্যান্য দিন নানা বিধিনিষেধে আনন্দ করা হয় না। আজ যেহেতু একটু ভিড়ভাট্টা কম তাই বন্ধুদের নিয়ে বের হয়েছি। আড্ডা দেব, ঘোরাঘুরি করব।’
গত বছরের মতো এবারও ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদেই হয়েছে জামাত। নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোলাকুলি বা হাত মেলাতেও দেখা যায়নি খুব একটা।
রাজধানীর প্রধান জামাত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। স্বাস্থ্যবিধি মসজিদে ৫টি জামাতে অংশ নেন মুসল্লিরা।
আগে থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও ঈদের সকালে রাজধানী ছিল রৌদ্যজ্জ্বল।
পুলিশপ্লাজার সামনে বিকালবেলা রীতিমতো মেলা বসে যায়। ছবি: নিউজবাংলা
রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়। কিন্তু এ বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
‘যেহেতু লকডাউন চলছে তাই কোনো আত্মীয়ের বাসাতেও যাচ্ছি না। বাচ্চারা বাসার বাইরে যেতে পারছে না তাদের জন্যই খারাপ লাগছে বেশি।’
এর মধ্যেও ব্যাতিক্রমও রয়েছে। করোনার জন্য ঈদের আনন্দ মাটি করতে চাননি শান্তিনগর এলাকারই আরেক বাসিন্দা আদনান রহমান।
তিনি বলেন, ‘ঈদে প্রতিবছরই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হই। এবারও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকায় স্বাচ্ছন্দেই ঘোরাঘুরি করা যাচ্ছে।’
ধানমন্ডি লেকেও বহু মানুষ বেড়াতে যান। ছবি: নিউজবাংলা
ঈদ সামনে রেখে স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো কয়েক দিনব্যাপী নানা আয়োজন সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
লকডাউনের কারণে আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও শহর থেকে ঘরমুখী মানুষ বাধা মানেননি। যে যার মতো করে বাড়ি ফিরেছেন। বিশেষ করে ফেরিঘাটে হাজার হাজার মানুষের জড়ো হয়ে নদী পার হওয়ার প্রবণতায় করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দেশে ১৩ এপ্রিল রজমান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন থেকে শুরু হয় রোজা।