যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-ভারত-অস্ট্রেলিয়ার জোট কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশকে দেয়া চীনা রাষ্ট্রদূতের ‘হুমকি’তে সমর্থন দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এটিকে ‘হুমকি’ না বলে পারস্পারিক সহযোগিতা বলছে দেশটি।
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন’ রাখার উপায় খোঁজার যুক্তি দেখিয়ে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ‘কোয়াড’ (কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ) সংলাপের সূচনা হয়।
কোয়াডে যোগ দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে বলে সোমবার এক অনুষ্ঠানে সতর্ক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
তিনি বলেন, ‘চীন মনে করে কোয়াড গ্রুপটি চীনবিরোধী। আমি এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোয়াড নিজেকে অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত বলে দাবি করলেও তা সত্য নয়। এটা একটি সামরিক জোট এবং মূলত এটা করা হয়েছে চীনের বিরোধিতার জন্য।
‘এই চার সদস্যের ক্লাবে যোগ দেয়াটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। কারণ এর ফলে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পরে লি জিমিং সমালোচনার মুখে ও নিজে থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে এ মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। ইংরেজি ভাষায় দখল কম থাকায় এমন ‘আউট অব কনটেক্সট’ বক্তব্য দিয়েছেন বলেও দাবি করেন।
তবে বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তবে চীন মনে করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে চীনের বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার জোট হিসেবেই চীনবিরোধীরা কোয়াড তৈরি করছে।’
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও এটি বিস্তারিত প্রকাশ করেছে বেইজিং।
হুয়া চুনইং বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, চীন ও বাংলাদেশ খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশী। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আমাদের সম্পর্ক তৈরি করেছি। আমরা একে অন্যকে সব সময় সম্মানের দৃষ্টিতে দেখি এবং মৌলিক স্বার্থ এবং উদ্বেগের মূল বিষয়গুলোতে পরস্পরকে সহযোগিতা করি।’
তিনি বলেন, ‘কোয়াড কোন ধরনের জোট, সেটি আমরা সবাই জানি। নির্দিষ্ট কিছু দেশ এ ধরনের ছোট ছোট বাবল তৈরি করে চীনকে আটকানোর যে পাঁয়তারা করে, চ্যালেঞ্জ জানায়, প্রতিবেশীদের উসকে দিয়ে গোল বাধানোর চেষ্টা চালায়, চীন নিশ্চয়ই তার বিরোধিতা করে।’
চীনা মুখপাত্র আরও বলেন, ‘কোয়াডে বাংলাদেশের যোগ না দেয়ার প্রশ্নে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা হুমকি হিসেবে দেখছে না বেইজিং। কারণ বেইজিং মনে করে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশ ও চীন সব সময় একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
এদিকে মঙ্গলবার চীনা রাষ্ট্রদূতের ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য লক্ষ করেছি। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একই সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারের বিষয়েও আমরা শ্রদ্ধাশীল।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে জলবায়ু পরিবর্তন, মানবিক ইস্যুসহ বিস্তৃত পরিসরে নিবিড়ভাবে কাজ করি।’
কোয়াডের প্রসঙ্গ টেনে আমেরিকান পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি কোয়াড হচ্ছে একটি অনানুষ্ঠানিক ও জরুরি বহুপক্ষীয় উদ্যোগ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের মতো সমমনা গণতান্ত্রিক দেশগুলো ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সমন্বিতভাবে কাজ করে। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা।’