বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিদ্যানন্দে ঈদ আনন্দ

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ২২:৩০

'ঢাকাতে আমাদের দুইটি রান্নাঘর আছে। একটি পল্লবীতে, আরেকটি কেরানীগঞ্জে। ঈদের দিন আমরা ৫০টি অসহায় পরিবারকে উন্নতমানের বিশেষ ডিস (রান্না) উপহার দেব। এছাড়া রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় দেড় হাজার প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। আর চট্রগ্রামে ঈদের তিন দিন আসহায় মানুষদের আমরা মেজবান খাওয়াবো।’

মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি চিকিৎসক আসমা আক্তার। ঈদের ছুটিতে ঢাকার নিজ বাড়িতে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ঈদ করছেন না। রাস্তার অসহায় মানুষের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এরই মধ্যে ঢুকে পড়েছেন বিদ্যানন্দের রান্না ঘরে।

ঈদের আগের দিন থেকে শুরু হওয়া ব্যস্ততা চলবে ঈদের পরদিন পর্যন্ত। ঈদের দিন নিজ হাতে ভালোমন্দ রান্না শেষে আসহায় মানুষের খাওয়ানোর বাসনা আছে তার।

শুধু এই ঈদেই নয়, ২০১৭ সালে বিদ্যানন্দের কাজে আসমা ঈদে কাটিয়েছেন সুনামগঞ্জে। আর গত বছর ঈদ করেছেন চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায়।

গত চার বছর কর্মক্ষেত্র থেকে যখনই ছুটি পেয়েছেন তখনই সেই ছুটি কাটিয়েছেন বিদ্যানন্দের মাধ্যমে মানুষের সেবায়। বর্তমান তিনি বিনা পারিশ্রমিকে বিদ্যানন্দের ১ টাকার চিকিৎসা প্রজেক্টের কোর্ডিনেটর হিসেব কাজ করছেন।

বৃহস্পতিবার কথা হয় তার সঙ্গে। বললেন, বিদ্যানন্দই আমার পরিবার। আমি বাসায় ঈদ করলে খুশি হবে পরিবারের ৪/৫ জন সদস্য। আর এখানে (রান্না ঘরে) ঈদ করলে ওইদিন শত শত অসহায় মানুষ পেট ভরে খেতে পারবে। তাই ৪/৫ জনকে খুশি করার চেয়ে শত শত মানুষের খুশি আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের রান্নাঘরে কাজ করছেন ডা. আসমা। ছবি: নিউজবাংলা

‘পরিবারের সদস্যরা আমার এই কাজ সম্পর্কে জানে। মজার ব্যাপার হলো, মানুষের জন্য কাজ করার তাৎপর্যটা বুঝতে পেরে এখন আমার পরিবারও এই কাজে আমাকে উৎসহ দেয়।’

প্রশান্তির হাসি ছড়িয়ে ডা. আসমা বলে চলেন, ‘‘এই কাজ করে আমি মানসিক শান্তি পাই। তাই যখন আমি হাসপাতালে থাকি তখনও চেষ্টা করি মানুষের সেবা করতে। আর যখন বাসায় (ঢাকায়) আসি তখন চেষ্টা করি বিদ্যানন্দে এসে কাজ করতে। আমার প্রজেক্ট ‘১ টাকার চিকিৎসার’ কাজ আপাতত বন্ধ। তাই বলে তো আর বসে থাকা যায় না। তাই বিন্দ্যানন্দনের রান্নাঘরে কাজ করছি।’’

শুধু আসমা আক্তারই নয়। তার মতো বিদ্যানন্দে ১০-১৫ জন সেচ্ছাসেবক এবার ঈদ করবেন আসহায়-ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে। মিরপুর পল্লবীতে অবস্থিত বিদ্যানন্দের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।

তাদেরই একজন তাহমিনা আক্তার। পেশায় স্কুলশিক্ষক। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় আট মাস ধরে তিনি বিদ্যানন্দের ১ টাকার আহারের রান্নাঘরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। রান্না-বান্না, তরকারি কোটা-বাছা—সব কাজই করেন তিনি। এই কাজেই তার আনন্দ।

কথা বলে জানা গেল, তার পরিবার দেশের বাইরে থাকে। এইচএসসিতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন তিনি। তহমিনা আক্তার বলেন, আগামীকাল ঈদের দিন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আসবো এই রান্না ঘরে। আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। আমাদের সামান্য একটু পরিশ্রমেই যদি হাজার মানুষ পেট পুরে খেতে পারে তার থেকে বড় আনন্দ আর হতে পারে না। এটাই (বিদ্যানন্দ) আমাদের ঘর, এটাই আমাদের পরিবার। এখানে ঈদ করা মানেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা।

পল্লবী অফিসের নিচতলা থেকে এক বস্তা চাল ঘাড়ে করে তৃতীয় তলায় উঠাচ্ছিলেন এক স্বেচ্ছাসেবী। তার পেছন পেছন তৃতীয় তলায় গিয়ে কথা বলে জানা গেল, তার নাম মিজানুর রহমান সৈকত। বাড়ি ফেনীতে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া শেষ করে তিনি ২০১৫ সাল থেকে নামমাত্র পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন বিদ্যানন্দে।

চালের বস্তা ঘাড়ে করে তিনতলায় উঠছিলেন সৈকত। ছবি: নিউজবাংলা

ঈদ কোথায় করবেন জানতে চাইলে সৈকত বলেন, আমার পরিবার দুইটা। এটাও আমার পরিবার, আবার ফেনীতেও আমার পরিবার। এবার আমি এখানে ঈদ করব। বাড়িতে মা-বাবা ভাই-বোন সবাই প্রথমে ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য জোর করছিল। কিন্তু আমি তাদের বোঝানোর পর তারাও আমার ইচ্ছা্র সঙ্গে একমত হয়েছেন।

সৈকত আর‌ও বলেন, দেখেন আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করেছি, চেষ্টা করলে এখন হয়তো আমি এসি রুমে বসে চাকরি করতে পারতাম। কিন্তু অসহায় মানুষের সহায়তা করার যে শান্তি, সেটা কি পেতাম? জানি না কতদিন এখানে কাজ করতে পারব। তবে যত দিন পারব আমি চেষ্টা করব এখানে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যেতে।

সৈকতের মতো মোহাম্মাদ ইউসুফও এবারের ঈদ করবেন বিদ্যানন্দের ব্যানারে দুস্থদের সেবায়। তার বাড়ি চাঁদপুরে। মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া শেষ করে ছয়মাস আগে নামমাত্র পারিশ্রমিকে যোগ দিয়েছে বিদ্যানন্দনে।

ইউসুফ বলেন, ভাই খুব ভালো আছি। অর্থনৈতিকভাবে কোনো রকম চলছে। কিন্তু যখন ভাবি, আমি মানুষের জন্য কাজ করছি তখন আর কোনো চিন্তা থাকে না। আল্লাহ যতো দিন এখানে রাখবে আমি এখানে ততদিন কাজ করে যাবো।

তিনি আরো বলেন, বাড়ির সবাই জানে আমি এখানে মানুষের জন্য কাজ করি। তাই তারাও আমাকে ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য চাপ দেয়নি। তারাও খুশি, কারণ আমি ঈদে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছি।

বিদ্যানন্দের রান্নাঘরে কাজ করছেন এক স্বেচ্ছাসেবী। ছবি: নিউজবাংলা

বিদ্যানন্দের হেড অব ইমেজ এন্ড কমিউনিকেশন সালমান খান ইয়াসিন নিউজবাংলাকে জানান, ঢাকাতে আমাদের মোট ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক আছেন। এর মধ্যে ১৫ জনকে আমরা ছুটি দিতে পারিনি। আসলে বিষয়টি ঠিক ছুটি না। কারণ অনেকেই ঈদে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৫ জনকে আমরা রেখেছি। বাকিরা আবার ঈদের পরে এসে যুক্ত হবেন।

তিনি জানান, ঢাকাতে আমাদের দুইটি রান্নাঘর আছে। একটি পল্লবীতে, আরেকটি কেরানীগঞ্জে। ঈদের দিন আমরা ৫০টি অসহায় পরিবারকে উন্নতমানের বিশেষ ডিস (রান্না) উপহার দেব। তবে কাদের এই ডিস দেবো সেটা এখনো ঠিক হয়নি। এছাড়া রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় দেড় হাজার প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। আর চট্রগ্রামে ঈদের তিন দিন আসহায় মানুষদের আমরা মেজবান খাওয়াবো। প্রতিদিন সেটা ২ হাজারের ওপরেও হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, করোনার শুরুতেই রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচির আওতায় নিজেদের দুইটি রান্না ঘর থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে বিদ্যানন্দ। এর মধ্যে নিজেদের কর্মীদের মাধ্যমে ঢাকায় দুই হাজার পরিবারকে এবং চট্টগ্রামে তিন হাজার পরিবারকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।

এই পাঁচ হাজার পরিবারের মধ্যে কোনো পরিবারকে দুপুরে আবার কোনো পরিবারকে রাতের খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর