বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মিতু হত্যা: নতুন মামলায় জটিলতার শঙ্কা

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ০৮:২৬

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় আগের মামলাটিতেই তার বিচারের সুযোগ ছিল। এর পরিবর্তে নতুন মামলা করায় বিচারে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি বেশ কিছু জটিলতা হতে পারে।

চট্টগ্রামে আলোচিত মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার পরপরই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন তার স্বামী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আকতার। তবে পিবিআইয়ের তদন্তে হত্যায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় বাবুলের বিরুদ্ধেই বুধবার নতুন মামলা করেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

এরই মধ্যে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বাবুলের করা মামলাটি নিষ্পত্তি করেছে পুলিশ। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় আগের মামলাটিতেই তার বিচারের সুযোগ ছিল। এর পরিবর্তে নতুন মামলা করায় বিচারে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি বেশ কিছু জটিলতা হতে পারে।

মেয়ে হত্যার পাঁচ বছর পর বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে হত্যার অভিযোগ তুলে জামাতা বাবুলের বিরুদ্ধে বুধবার চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ। এ মামলায় বাবুল আকতারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

পাশাপাশি বাবুলের আগের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। নতুন করে মিতুর বাবার করা মামলার তদন্তের দায়িত্বও পেয়েছেন সন্তোষ কুমার চাকমা।

সন্তোষ কুমার চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলার যে বাদী তার বিরুদ্ধেই প্রমাণ পাওয়া গেছে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত। মামলা যখন ট্রায়ালে যাবে তখন দেখা যাবে, এজাহারের অভিযোগ যখন সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়, সেটা বাদীকেই প্রমাণ করতে হয়। তখন একটু বিচারকাজে সমস্যা হয়।

‘এই কারণে ওই মামলায় আমরা এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) দিয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িত করে নতুন মামলা দাখিলের কথা বলেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্তে প্রমাণ পেলে মামলার বাদীকে আসামি করতে হবে। তবে নতুন করে মামলা করার প্রয়োজনীয়তা নেই।’

একই ঘটনায় একাধিক মামলার সুযোগ নেই জানিয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘একই ঘটনায় এক মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে ফের নতুন করে মামলা করায় ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত হবে। এ মামলা প্রমাণে জটিলতা তৈরি হবে। মামলার বিচারে অনিশ্চয়তা এবং দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে।’

একই ধরনের মতামত দিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো ঘটনার তদন্ত করে যদি এমন আসে যে, যিনি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনিই আসলে প্রকৃত অপরাধী, সে ক্ষেত্রে তাকে মামলার আসামি করা যেতে পারে। আইনে এমন কোনো বিধান নাই, যিনি মামলা দায়ের করবেন তিনি কখনও আসামি হতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রেও এমনটি করা যেত।’

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘নতুন করে ফ্রেশ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এটা করার সুযোগ আছে। কিন্তু এটার দরকার ছিল না। ওই মামলায় তদন্ত করেই পুলিশ আদালতে রিপোর্ট দাখিল করতে পারত। নতুন মামলা করাতে আইনগত বেনিফিট অব ডাউট আসামির পক্ষে যাবে এবং মামলার দীর্ঘসূত্রতা তো আছেই।’

আরেক আইনজীবী শিশির মনির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্তে যদি যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার বাদীকে সন্দেহ হয়, তাহলে তাকে আসামি করতে আইনে কোনো বাধা নেই, বরং এটাই নিয়ম। একই ঘটনায় একাধিক মামলা হতে পারে না। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়েও বলা আছে।

‘মামলার যেকোনো পর্যায়ে বাদীকে আসামি করা যেতে পারে। আগের মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে নতুন করে মামলা করে বাদীকে আসামি করার ফলে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে।’

তবে আইনজীবীদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো মামলার তদন্ত করে যদি দেখা যায় বাদীই অপরাধী, তাহলে ওই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে ফ্রেশ মামলা করাই হচ্ছে বিধান। এটাই প্র্যাকটিস। একই ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও বিচার হবে একটি মামলার।’

নতুন করে মামলার ফলে কোনো জটিলতা হবে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘আগের মামলার তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ নতুন মামলায় ঢুকে যাবে।’

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে। ঘটনার পর তখনকার এসপি বাবুল আকতার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মামলায় বাবুল অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

স্ত্রী মিতুর জানাজায় সহকর্মীদের সঙ্গে বাবুল আকতার। ছবি: সংগৃহীত

তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এই হত্যার জন্য জামাতাকে দায়ী করে আসছিলেন।

শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেয়।

পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বুধবার এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, মিতু হত্যায় বাবুলের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য নতুন একটি মামলায় তাকে আসামি করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর