করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ রোধ ও মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে এবার ঈদের নামাজ ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে মসজিদে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
কিন্তু ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে।
সরকারি নির্দেশনা মেনে জাতীয় ঈদগাহেও নেয়া হয়নি কোনো প্রস্তুতি। ঈদের নামাজের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানেও। বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি ঈদের জামাত আদায়ের সূচিও নির্ধারণ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এমন বাস্তবতায়, ঈদের আগে সরকারি অফিসের শেষ দিনে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন বক্তব্য নিয়ে ঘোলাটে হয়েছে পরিস্থিতি।
রমজান মাসে সরকারি অফিসের সময় ঠিক করা হয়েছে বেলা তিনটা পর্যন্ত। সাড়ে তিনটার দিকেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন কোনো পরামর্শ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেনি।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমাদের কাছে যতক্ষণ লিখিত কোনো ডকুমেন্টস না আসবে, ততক্ষণ মন্ত্রণালয় তার আগের সিদ্ধান্তে বহাল থাকবে।’
২৬ এপ্রিল জারি করা বিজ্ঞপ্তি সরকারের সিদ্ধান্ত বলেও জানান তিনি।
ওইদিন ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা যাবে। তবে ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কোনো কার্পেট বিছানো যাবে না। মুসল্লিদের নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসতে হবে। আর নামাজ শুরুর আগে পুরো মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মসজিদে অজুর স্থানে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের ঢোকার মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর ঈদ জামাত হয়েছে কেবল মসজিদে। এবারও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইছে জামাত হোক মাঠে
সরকারি নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাড়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। শিশু, বয়স্কসহ যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি ও অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশ নিতে পারবেন না। জামাত শেষে কোলাকুলি ও পরস্পর হাত মেলানো যাবে না।
সরকারের এ নির্দেশনা মানা না হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ইসলামী শরিয়তে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের জামাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বসহ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিজনিত কারণে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়ে খোলামেলা জায়গায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ঈদের জামাত করতে পরামর্শ দিয়েছি। খোলা জায়গায় বায়ুপ্রবাহ থাকার কারণে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কম থাকে। ধর্ম মন্ত্রণালয় যা বলছে, আমরা পরীক্ষা করে দেখব। তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। আশা করি এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তার দুটো নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওরা (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) এমন মতামত দিতে পারে। খোলা ময়দানে ঈদের জামাত আদায়ের বিষয়ে অন্তত ১৫-২০ দিন আগে জানাতে হয়। এটার একটা প্রস্তুতি থাকে। শেষমুহূর্তে এসে তারা যদি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে তো সারাদেশে রাতারাতি ঈদগাহে নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয় না।’
খোলা ময়দানে শুধু নামাজ আদায় তো নয়, সার্বিক নিরাপত্তা থেকে, আবহাওয়া পরিস্থিতি থেকে শুরু করে নানা দিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলেও জানান তিনি।
এরপরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে এমন কোনো পরামর্শ এলে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
তবে তার কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গেল, এত অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা কঠিন হবে সরকারের জন্য।