ঢাকার অদূরে সাভারের আমিনবাজার। মঙ্গলবার রাত ৯টা। বাজারের ট্রাকস্ট্যান্ডে আলো-আঁধারে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো আছে সারি সারি ট্রাক।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ধরে হেঁটে চলেছে অগণিত মানুষ। এরা দূরের গন্তব্যে যাবেন। এই জনস্রোতকে লক্ষ্য করে চালক ও তাদের সহকারীরা হাঁক দিচ্ছেন।
কেউ বলছেন, এই বগুড়া ১ হাজার টাকা। আবার কেউ বলছেন, চাঁপাই ১ হাজার। অন্যরা বলছেন, রাজশাহী ১ হাজার।
ঈদে ঘরমুখী মানুষের অনেকেই তাদের সঙ্গে দরদাম করছেন। ভাড়া একটু কমানোর জন্য কাকুতি-মিনতি করছেন। কিন্তু ভাড়া কমানোর কোনো লক্ষণ নেই। এরপর নিরুপায় হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের ট্রাকে উঠছেন অনেকে।
মহাসড়ক থেকে অল্প একটু দূরে আঁধারে রাখা আছে ট্রাকগুলো। নারী ও শিশু নিয়ে অনেককেই ট্রাকে উঠতে দেখা গেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস। আর এ কারণেই বাড়ি যেতে মরিয়া মানুষগুলো খুঁজছেন অন্য যানবাহন। ট্রাকে উঠছেন পণ্য সেজে। ভাড়া গুনছেন কয়েক গুণ। বসছেন গাদাগাদি করে।
ট্রাকে এত ভাড়া কেন জানতে চাইলে বগুড়াগামী একটি ট্রাকের চালক নিউজবাংলাকে জানান, ‘রোডের খরচ আছে। তাই ভাড়া বেশি।’
ট্রাকের পাশেই একটি প্রাইভেট কার। চালক তার গাড়িতে গাদাগাদি করে যাত্রী তুলছেন। ভাড়া জানতে চাইলে বলেন, ‘পার পিস ৮০০ টাকা।’
প্রাইভেট কারটির কাছেই আরেকটি ট্রাক। সেটি ঘিরে চালক ও তার সহকারী ব্যস্ত যাত্রী তোলায়। অন্ধকারে যাত্রী তোলার কারণ কী জানতে চাইলে চালকের সহকারী বলেন, ‘প্রকাশ্যে যাত্রী তুললে সমস্যা আছে। যাদের দরকার, তারা অন্ধকারে গিয়েই উঠবে।’
সরকারের দেয়া লকডাউন চলছে। রাস্তায় চেকপোস্ট আছে। তাই পুলিশ তাদের ধরবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সার্জেন্ট ম্যানেজ করা আছে। রাত ১০ টার পর থেকে ট্রাক গন্তব্যের দিকে রওনা দেবে, তখন চেকিংয়ে পড়লেও ম্যানেজ সহজ হয়। তা ছাড়া যাত্রী তোলার পর ট্রাকের ওপর বাঁশের মাচা তৈরি করে তার ওপর ত্রিপল টানিয়ে দেয়া হবে। তাতে বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যাবে না। এই ট্রাকে মাল যাচ্ছে, নাকি মানুষ যাচ্ছে।’
বিধিনিষেধ অমান্য করে এই যে পণবাহী ট্রাকে করে ঘরমুখী মানুষকে বহন করা হচ্ছে, মানুষগুলোকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে, এ বিষয়ে পুলিশ কী করছে জানতে চাইলে গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান নিউজবাংলাকে জানান, ‘যেখান থেকে ট্রাকে যাত্রী তোলা হচ্ছে, সেটা আমাদের নয়। ওই এলাকা ঢাকা জেলা পুলিশের দায়িত্বে রয়েছে।’
পরে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফির কাছে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক মানুষ যাতে ঢাকার বাইরে যেতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। গাড়ি আটক করছে পুলিশ।
‘পাশাপাশি মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াতে নিরুৎসাহিত করে যাচ্ছে। তারপরও অসংখ্য মানুষ রাস্তায় বের হয়ে হেঁটে, রিকশায়, ভ্যানে, প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাকে চড়ে নানা গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’