বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈদে নৌ শ্রমিক-মালিকের চোখে অন্ধকার

  •    
  • ১১ মে, ২০২১ ২১:৪১

সদরঘাটকেন্দ্রিক লঞ্চে কাজ করেন পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক। এর বাইরে অন্যান্য শ্রমিক আছেন আরও কয়েক হাজার। সেই হিসেবে সদরঘাট ঘিরে থাকা প্রায় হাজার দশেক শ্রমিক লঞ্চ বন্ধ থাকায় এখন কর্মহীন। তাদের একটি অংশ গ্রামে চলে গেলেও বাকিরা সদরঘাট ও আশপাশে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

সদরঘাটের অতি পরিচিত ব্যস্ত চিত্র অনেক দিন ধরে উধাও। বাড়িমুখী মানুষের ভিড় নেই, বিরান ঘাটে নেই লঞ্চে কর্মীদের হাকডাক। সদরঘাট ঘিরে হকারদেরও ব্যস্ততাও নেই।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্তের আলোকে ৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চ। আর তাতে কর্মহীন হাজার হাজার নৌশ্রমিক।

এক মাসের বেশি হয়ে গেল আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ। প্রতিবার ঈদে বাড়তি কিছু রোজগার হতো, এবার তাও নেই। সদরঘাটকেন্দ্রিক জীবিকা যাদের, তাদের কাছে এবারের ঈদ আসছে হতাশা আর হাহাকার নিয়ে। ঈদের দিন সেমাই দূরের কথা, অনেকের একবেলা ভাত খাওয়ার টাকাও নেই।

লঞ্চ মালিকেরা জানান, সদরঘাটকেন্দ্রিক লঞ্চে কাজ করেন পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক। এর বাইরে অন্যান্য শ্রমিক আছেন আরও কয়েক হাজার।

সেই হিসেবে সদরঘাট ঘিরে থাকা প্রায় হাজার দশেক শ্রমিক লঞ্চ বন্ধ থাকায় এখন কর্মহীন। তাদের একটি অংশ গ্রামে চলে গেলেও বাকিরা সদরঘাট ও আশপাশে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

পুরান ঢাকার সদরঘাটে এলাকায় মঙ্গলবার দেখা যায় শুধুই নিরবতা।

জনশূন্য ঘাট। ছবি: নিউজবাংলা

বন্দরের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছিলেন অনেক শ্রমিক। কাজের আশায় তাদের কেউ কেই আশপাশের মার্কেটে ঢু মারছিলেন। ছোটখাটো কিছু কাজ মিললেই খুশি ছড়িয়ে পড়ছিল চোখেমুখে।

আর বন্দরের ভিতরে পন্টুনে নোঙর করে রাখা শতাধিক লঞ্চের শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছেন। ব্যস্ততা নেই, আয় নেই, তাই ঈদ ঘিরে কোনো আনন্দও নেই।

প্রতিটি লঞ্চেই কেবিন বয়, ইঞ্জিন রুম স্টাফ, ক্যান্টিন স্টাফ মিলিয়ে ২০-২৫ জন ঘাটে অবস্থান করছেন। লঞ্চ যত বড় স্টাফ সংখ্যা তত বেশি। এই স্টাফদের একটা বড় অংশ লঞ্চেই থাকেন। তারা মালিকের কাছ থেকে কিছু টাকা পেলেও আয়ের আর সব পথ বন্ধ।

ঈগল-৯ লঞ্চের লস্কর আতিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেবিন বয়সহ আমাদের বেতন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকায় সংসার চলে না। লঞ্চ চললে বাড়তি কয়টা টাকা আসে টিপস থেকে। ওইটা দিয়েই চলতে হয়। আমাদের মালিকসহ অনেক মালিকই বেতন দিচ্ছে, কিন্তু এই টাকায় চলা যায় না।’

শ্রমিক নেতারা বলছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লঞ্চ আর দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে, অথচ বাকি সবই খোলা। এ ধরনের সিদ্ধান্তে করোনা মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব, সেই প্রশ্ন তাদের।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের (নদী ও বন্দর) কার্যকরী সভাপতি শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত মানছি। কিন্তু আমাদের দিকে সরকার তাকাচ্ছে না। এই সময়ে সবাই কোনো না কোনো উপায়ে আয় রোজগার করছে। আমাদের একেবারেই বন্ধ। আমরা চাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সাপেক্ষে লঞ্চ চলতে দেয়া হোক।’

অচলবস্থায় ভালো নেই লঞ্চ মালিকেরাও। ঈদ সামনে রেখে শ্রমিক কর্মচারিদের বোনাস ও বেতন দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন লঞ্চ মালিকদের সংগঠনের মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিস্থিতি সবার জানা। এখন মূল চ্যালেঞ্জ শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া। আমাদের ক্ষতি তো হচ্ছেই। লঞ্চগুলো বসা, মালিকদের ব্যাংকের লোন, সব মিলিয়ে খারাপ অবস্থা।’

লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রণোদনার আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার যেহেতু লঞ্চ বন্ধ রাখছে, আমরা মেনে নিছি। আমরা প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয়ে কাজ চলছে। এটা হলে কিছুটা রিলিফ পাব। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে পারব। কিছুটা শান্তিতে ঈদ কাটানো যাবে।’

লঞ্চ বন্ধ তাই রিকশা চালান

কাজ হারিয়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন পিরোজপুরের রিয়াদ। সদরঘাটে তিনি কুলি হিসেবে কাজ করতেন। তবে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে লঞ্চ বন্ধ থাকায় উপার্জন বন্ধ। বাড়িতেও ফিরতে পারছেন না। এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে সদরঘাট এলাকায় রিকশা চালাচ্ছেন তিনি।

রিয়াদ বলেন, ‘দুই বেলা খাওনসহ একদিনে খরচ দুইশ টাকার মতো। রাতে থাকতে দেয়া লাগে একশ টাকা। এই টাকা কই পামু! এখন রিকশা চালাই। যে কয় টাকা আসে তাতে খেয়ে থাকতে পারি।’

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের আশপাশে থাকা মার্কেটগুলোতে পণ্য বহনের কাজে নেমেছেন অনেক শ্রমিকেরা। তারা বলছেন, যখন যে কাজ পাওয়া যাচ্ছে তাই করছেন। কোনোমতে খেয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করছেন তারা।

ঘাটে কুলি হিসেবে কাজ করেন রমজান, বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়। ছয় বছর ধরে এই সদরঘাটই তার জীবন আর জীবিকার কেন্দ্র। ঈদের সময়ে বাড়তি কিছু আয় হয়, সেই টাকা নিয়ে প্রতিবার বাড়ি যেতেন রমজান। বাবা-মা, ভাইবোনদের নিয়ে ভাগাভাগি করতেন ঈদ আনন্দ।

তবে এবার চিত্র একেবারেই আলাদা। বাড়তি আয় দূরের কথা, নিয়মিত উপার্জনটুকুও নেই। আর দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় বাড়ি ফেরাও অনিশ্চিত।

রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টাকা নাই, বাড়ি যাইয়া কী অইবো? দুই বেলা খাইয়া থাকতে পারতেছি না। বাড়িতে কী নিয়া যামু? যাওয়ার তো উপায় নাই, সব বন্ধ।’

যাত্রীহীনতায় শূন্য সদরঘাটের শপিংমল

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের আশপাশে বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রির বাজার রয়েছে। এসব মার্কেটেও ক্রেতার উপস্থিতি অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক কম।

বিক্রেতারা বলছেন, লঞ্চের সঙ্গে এসব মার্কেটের একটা বড় যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকার বাইরে পাইকারি পণ্য পাঠানো থেকে শুরু করে খুচরা পণ্য বিক্রি লঞ্চের যাত্রীদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এখন লঞ্চ বন্ধ থাকায় তাই মার্কেটও ক্রেতাশূন্য।

সদরঘাট টার্মিনাল ঘেঁষেই রয়েছে ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউশন সুপার মার্কেট। দ্বিতীয় তলায় পাইকারি তৈরি পোশাক বিক্রি করেন ফরহাদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পাইকারি বিক্রি করলেও এর পরিবহনের কাজটি লঞ্চের মাধ্যমেই হয়। লঞ্চ বন্ধ থাকায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি।’

নিষ্প্রাণ সদরঘাটের কারণে ফুটপাত ও আশপাশের খুচরা পণ্যের মার্কেটও ক্রেতাশূন্য। সদরঘাট এলাকায় ফুটপাতে শিশুদের পোশাক বিক্রি করেন নজরুল। তিনি বলেন, ‘এইবার কাস্টমার নাই। যাত্রীরা যাওয়ার সময় কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে যান। এবার তা হচ্ছে না।’

এ বিভাগের আরো খবর