ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখী মানুষের পাশাপাশি যানবাহন পারাপারে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে চলছে সবগুলো ফেরি।
এর ফলে ঘাট নিয়ে বিধিনিষেধের সিদ্ধান্তে বারবার পরিবর্তন এবং নিষেধাজ্ঞা দিয়েও তা শিথিল করে রাখায় কয়েক দিন ধরে যাত্রীদের যে ভোগান্তি হচ্ছিল, তা অনেকটা কমেছে।
মঙ্গলবার শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ থাকলেও সব ফেরি চলায় ছিল না দীর্ঘ অপেক্ষা। সকাল থেকে একের পর এক কয়েকটি ফেরি যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
কিছু পণ্যবাহী যান সকালে অপেক্ষায় থাকলেও দেখা যায়নি কোনো হট্টগোল কিংবা যানজট।
শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, সকাল থেকে তাদের বহরে থাকা সবগুলো ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ফেরিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ শিমুলিয়া ঘাট ছেড়ে গেছে। সোমবার রাতভর ফেরি চলাচল করেছে।
এ কারণে ঘাটের যানবাহন এবং যাত্রীর চাপ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
এ ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) হিলাল উদ্দিন বলেন, ঘাট এলাকার কাছে কয়েকটি পয়েন্টে পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে আছে। আগে ঘাটের গাড়িগুলো পার করে তারপর এগুলো ছাড়া হবে।
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে দেখা গেছে ভিড়। সকালে এই ঘাট ছেড়ে গেছে একটি ফেরি, যাতে যাত্রীর পাশাপাশি ছিল কিছু যানবাহন।বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমানের দাবি, লাশবাহী, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহনের সঙ্গে কিছু মানুষ ফেরিতে পার হচ্ছে। তবে ঘাটে গিয়ে এই দাবির সত্যতা দেখা যায়নি। ফেরিতে যাত্রীদের ভিড়ে যানবাহনগুলোই ঢাকা পড়ে গেছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যাত্রী যাতে পার না হয়, সেজন্য ঘাটের লোকজনকে বলা আছে। কিন্তু যাত্রী ও মানুষ তো আমাদের লোকজনের কথা শোনে না।
‘লাশবাহী, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহন নিয়ে ঘাট থেকে যাচ্ছে ফেরি।’
তিনি আরও জানান, এই নৌপথে ১৬টি ফেরির মধ্যে মঙ্গলবার সকালে একটি ছাড়া হয়েছে। দিনে ছয়টি ফেরি চালানো হবে। অতিরিক্ত চাপ পড়লে আটটা ফেরি চালানো হবে। তাতেও কাজ না হলে প্রয়োজন অনুযায়ী ফেরি চালানো হবে। তবে যাত্রী পারাপারের বিষয়ে নিষেধ আছে।
ঘাটে এলাকায় মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, নদী পাড়ি দিতে অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক শ যাত্রী, ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি ও দুই শরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। ঘাটেও জটলা যাত্রীদের।
ঘাট সূত্রে জানা যায়, একটি ফেরি পন্টুনে ভিড়লেই তাতে হুমড়ি খেয়ে যাত্রীরা উঠে যায়। সেটি ছেড়ে গেলে কিছু সময়ের জন্য ঘাট কিছুটা ফাঁকা হলেও পরে ফেরির অপেক্ষায় দুই-তিন ঘণ্টায় আবার জটলা বেড়ে যায় যাত্রীদের।
ঘাট নিয়ে সিদ্ধান্ত ও শিথিল বিধিনিষেধ
ঈদের আগে প্রতিটি ঘাটে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে যাত্রী নিয়ে ফেরি চলাচলের অনুমতি দেয়ার কিছুক্ষণ পরই সোমবার আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জিল্লুর রহমান সোমবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে নির্দেশ এসেছিল যাত্রী নিয়ে সবগুলো ফেরি চলবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার জানানো হয়, আগের মতোই জরুরি প্রয়োজনে সন্ধ্যার পর থেকে ফেরি চলবে। তবে বাড়ানো হয়েছে দুইটি ফেরি। জরুরি প্রয়োজনে আরও ফেরি বাড়ানো হতে পারে।’
বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দিনের বেলা ফেরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বলবৎ আছে। তবে দিনের বেলা আমাদের জরুরি সার্ভিস রোগী আর অ্যাম্বুলেন্স পার করা, সেটা ২৪ ঘণ্টা চালু আছে। বর্তমানে জরুরি সার্ভিস আরও দুটি বাড়িয়েছি।’
পাটুরিয়া ঘাটের ডিজিএম জিল্লুর রহমান সোমবার বিকেলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ঈদের আগে প্রতিটি ঘাটে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে যাত্রী নিয়ে ফেরি চলাচলে অনুমতি দিয়েছে সরকার। সে নির্দেশ আসামাত্র সব ফেরি চালুও করে দেয় পাটুরিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চলা লকডাউন কয়েক দফা বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৬ মে থেকে শহরগুলোতে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হলেও বন্ধ রয়েছে আন্তজেলা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। শুধু পণ্য পরিবহনের জন্য চালু রাখা হয়েছিল ফেরি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শুক্রবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, শনিবার থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। রাতে শুধু পণ্যবাহী পরিবহন পারাপারের জন্য ফেরি চলবে।
এরপর শনিবার বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান ঘোষণা দেন, ফেরিতে যাত্রী পারাপার ঠেকাতে ঘাটে থাকবে তাদের টহল দল।
তবে এসব বিধিনিষেধে থেমে ছিল না ঈদযাত্রা। শিমুলিয়া ও পাটুরিয়ায় দিনেও চলেছে ফেরি। পণ্যবাহী ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি পারাপারের জন্য সেগুলো ছাড়া হচ্ছে বলে ঘাট কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও প্রতি ফেরিতে যাত্রীদের ভিড়ে চোখেই পড়েনি যানবাহন।
বিজিবি ও পুলিশের টহলের মধ্যেও ঘাটে এসেছেন হাজার হাজার যাত্রী। ঘাটে ফেরি ভিড়লেও যে যেভাবে পেরেছেন উঠেছেন সেগুলোতে।