‘আমাদের গ্যারেজে যত গাড়ি চোখে পড়বে কোনোটারই ফিটনেস নাই। এতে সমস্যা নাই। ফিটনেসহীন গাড়িতে ফিটনেস দিতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ দিন। এরপর গাড়িকে নতুনের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগে।’
কথা হচ্ছিল গাজীপুরের পূবাইলে একটি গ্যারেজের কারিগর আলাউদ্দিনের সঙ্গে (ছদ্মনাম)।
তিনি বলেন, ‘ঈদ আসলে কাজের চাপ বাইড়া যায় কয়েক গুণ। দুই বছর যাবৎ করোনার জন্য কাজের চাপ কম হলেও রঙের কাজের চাপ কমেনি।’
কয়েকদিন পর ঈদ। ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকা ও শিল্পনগরী গাজীপুর ছাড়তে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এ যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে পরিবহনের ওপর। লকডাউনে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে। কিছুদিন পরে আবার চালু হতে পারে এই আশায় নষ্ট বা পড়ে থাকা গাড়ি মেরামত করতে চাইছেন পরিবহনমালিকরা। এ জন্য ঘষেমেজে পুরোনো গাড়িকে নতুন করতে শেষ সময়ে চলছে কারিগরদের তোড়জোড়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টঙ্গী মিল গেট, হোসেন মার্কেট, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, চন্দনা, কোনাবাড়ি, পূবাইল ও তুরাগে চলছে মেরামত ও রঙের কাজ। রোজার এক মাস আগে শুরু হওয়া এ কাজ শেষ হবে ২৫ রমজান। ওয়ার্কশপগুলোতে দুই মাস ধরে পুরোদমে চলে মেরামতের কাজ। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কাজের চাপ কম।
তুরাগে তামিম ওয়ার্কশপের শ্রমিক মো. সোহেল রানা বলেন, ‘এ পেশায় আমি ২০ বছর। দুই বছর যাবৎ করোনার কারণে কিছুটা কাজের চাপ কম। তবুও কাজের অর্ডার আছে। আরও চার-পাঁচ দিন কাজ চলবে।’
মিতালি ইঞ্জিনিয়ারিং মোটর ওয়ার্কসের মালিক মো.খোরশেদ আলম বলেন, ‘হাজার হাজার বাসমালিক সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। তারা দুটি ঈদে ব্যবসা করবেন বলে এসব গাড়ি সার্ভিস করেন। আমরাও তাদের জন্য অপেক্ষায় থাকি। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে কী হয় বলা যায় না। সবকিছুই সরকারের ওপরে নির্ভর করছে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কাজের চাপ অনেক কম। অনেক গাড়ির মালিক গাড়ি বিভিন্ন গ্যারেজে ফেলে রাখছেন। এতে অনেক গাড়ি এ বছর রোডে নামছে না।’
রং হওয়ার অপেক্ষায় থাকা বাস
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, ‘গাড়ির বিভিন্ন নষ্ট অংশে নতুন সেট দিয়ে ঝালাই করে রং লাগিয়ে ছোটখাটো মেরামত করে এসব গাড়ি নতুন করা হয়। তবে এমনভাবে কাজ করানো হয়, সড়কে পুলিশও ধরতে পারবে না।’
ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইলের লং রুটে চলা ফিটনেসহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলো জোড়াতালি ও রং দেয়া হচ্ছে এসব ওয়ার্কশপে।
গাড়ি মেরামতে দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। কোনো গাড়ির ইঞ্জিন ও ব্রেকে সমস্যা, কোনোটির সিট ছেঁড়া, আবার কোনোটির বডিতে রং নেই।
সড়কে দুর্ঘটনার জন্য এসব বাস দায়ী নয় এমন দাবি মালিকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসমালিক বলেন, ‘রোডে বাস চললে ছোটখাটো ত্রুটি হতেই পারে। আমাদের একটি ইঞ্জিন ও চেসিসের মেয়াদ ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫ বছর। এর আগে তেমন কিছু হয় না। সড়কে যে দুর্ঘটনা হয় সেগুলো সাধারণত অসচেতনতা ও ড্রাইভারদের প্রতিযোগিতার কারণে হয়।’
তুরাগ পবিরহনের মালিক মো. সোলেইমান হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদে আমার তিনটি গাড়ি রং করে রাস্তায় নামানো হয়। বিশেষ করে বছরে দুটি ঈদ সুন্দর করে করব এটাই আশা করি। এ বছর তিনটা গাড়ির মধ্যে একটা গাড়ি রং করানো হয়েছে।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের অভিযান হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস না থাকলে গাড়ি সঙ্গে সঙ্গে আটক করা হবে। তবে ফিটনেসহীন গাড়ি নতুন করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া অদক্ষ চালকসহ মালিকদের আইনের আওতায় আনা হবে।’