করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত লকডাউনে বন্ধ রয়েছে আন্তজেলা বাস চলাচল। সংক্রমণ কমাতে সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবার ঈদে বাড়ি যেতে নিরুৎসাহিত করছেন লোকজনকে। কিন্তু এরপরও থেমে নেই ঘরমুখী মানুষের ঢল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, মোগরাপাড়া ভুলতা এলাকায় গরমের মধ্যেই লোকাল বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, ইজিবাইক, পিকআপ, ট্রাক, মাইক্রোবাসে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে উঠে পড়ছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা।
কাছাকাছি অঞ্চলে যেতে গত কয়েকদিন ছোট যান চলাচল করলেও সোমবার সকাল থেকে বেড়েছে বড় যানবাহনও। কিছুক্ষণ পরপর দূরপাল্লার বাসও চলাচল করছে এ দুইটি মহাসড়কে। তবে বাস থামাতে সড়কে অবস্থান করতে দেখা গেছে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের।
সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কে বাড়তে থাকে যাত্রীদের ঢল। অধিকাংশ মানুষ মহানগর এলাকায় চলাচলরত বাসে গন্তব্যে রওনা হন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় এলাকায় গন্তব্যে যেতে পিকআপভ্যানে উঠছেন এক নারী। ছবি: নিউজবাংলা
ট্রাক ভর্তি করে উত্তরাঞ্চলের দিকে যাচ্ছেন অনেকে। মাইক্রোবাসে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ এই দুই বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যেতে দেখা গেছে হাজারো যাত্রীকে। তবে কুমিল্লা, ফেনী, ভৈরব পর্যন্ত অনেকে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছেন।
মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে দূরপাল্লার বাস। মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানো হয়েছে। তবে ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ। তা দিয়েও যেতে রাজি ঘরমুখী মানুষরা।
কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে রওনা হওয়া সোহেল জানান, ভোরে সাইবোর্ড এলাকায় এসেছেন। দূরপাল্লার বাস এখনও পাননি।
তিনি জানান, স্ত্রীকে নিয়ে পিকআপভ্যানে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই অপেক্ষা করছেন। অসহ্য গরমে আরও ভোগান্তি হচ্ছে।
বড় বোনকে নিয়ে চট্টগ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছেন তৌফিক হাসান।
তিনি বলেন, ‘ঈদে কম-বেশি সবার সঙ্গে মালপত্র থাকে। যাত্রীর ভাড়া তো দ্বিগুণ। সেই সাথে মালের ভাড়াও চায়। তারপরও এত মানুষ যে গাড়ি পাওয়া যায় না।’
শিমরাইল এলাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে রাসেল মিয়া, তার স্ত্রী ও তাদের দেড় বছরের শিশু জান্নাতকে। তারা যাবে ফেনী।
রাজমিস্ত্রি রাসেল বলেন, ‘মাইক্রোবাসে তিনজনের ভাড়া চায়। তাই যাইতে পারতাছি না। গরমে স্ত্রী-সন্তানের অবস্থা খারাপ। লোকাল বাসেও অনেক ভিড়।
‘তাই এখনও যেতে পারি নাই। অপেক্ষায় আছি দূরপাল্লার বাস আসলে উঠে পড়ব।’
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিমরাইলে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। ছবি: নিউজবাংলা
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখী মানুষের ঢল আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তারা সরকারি বিধিনিষেধ না মেনে ছুটছেন। আমরা মানুষকে তো আটকে রাখতে পারব না।
‘তবে দূরপাল্লার বাস যাতে যেতে না পারে সে জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোলপ্লাজা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোলাকান্দাইল ভুলতা ও এশিয়ান হাইওয়ের সামনে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। মানুষ যদি সচেতন না হয় তাহলে সামনে আরও চাপ বাড়বে।’
জেলা ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার সড়ক ও বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ৫ শর বেশি পুলিশ কাজ করছে।
‘গত কয়েক দিনে দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের নামে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া মাইক্রোবাস, ট্রাক ও পিকআপ জব্দ করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও মানুষ থামানো যাচ্ছে না।’