করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার স্বল্পতার মধ্যে বুধবার বাংলাদেশে আসছে চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-করভির উপহারের ৫ লাখ ডোজ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সোমবার সকালে এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ কথা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার চীনের টিকা আসার সময় জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আগের দিন বুধবার টিকা পেতে আগ্রহীদের নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার।
ওই দিন বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে এখনও ১৪ লাখ টিকা সংকট রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিতের পর আবার নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হবে।’
এমন বাস্তবতায় চীনের টিকা আসার খবর জানিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূত বলেন, সিনোফার্মের টিকাকে বাংলাদেশ যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাকে ঐতিহাসিক মনে করছে চীন।
তিনি বলেন, ডব্লিউএইচওর আগেই বাংলাদেশের স্বীকৃতিটি ছিল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত। এটি চীন ও বাংলাদেশের করোনা নিয়ে সহযোগিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
করোনা মহামারিতে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা নিয়ে কূটনৈতিক বিটে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাব সদস্যদের সঙ্গে এ সংলাপ হয়।
বক্তব্যের শুরুতে চীনা রাষ্ট্রদূত সবাইকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, চীন এরই মধ্যে ২০ কোটি টিকা বিশ্বের ৮০টি দেশে বিতরণ করেছে। এতেই প্রমাণিত হয় বিশ্বে টিকাদানে চীন নেতৃত্ব দিচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন ও বাংলাদেশ অভিন্ন সংকটের মোকাবিলা করে আসছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির পর মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ চীন থেকে বেশ কিছু চিকিৎসাসামগ্রী এনেছে।
তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই মহামারি মোকাবিলায় একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তা ছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে অলোচনা করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফর সম্পর্ক দৃঢ় করেছে। এ ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে যে যোগাযোগ বেড়েছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক বেগবান হয়েছে।
বাংলাদেশ মহামারির প্রথম ধাপ ভালোভাবে সামলেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ভাইরাস আমাদের সাধারণ শত্রু। একে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
‘তাই তো ২৭ এপ্রিল ৬ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনা সহযোগিতায় একমত হয়েছে। চীন ভারতকে এ ছয় দেশের জোটে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে টিকা পেতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত চীন।’
করোনা মোকাবিলা নিয়ে লি জিমিং বলেন, ‘বিশ্বের কোনো দেশ নিজেকে আলাদা করে রাখতে পারবে না। মানবকল্যাণে সবাইকে একসঙ্গে এ মহামারি মোকাবিলা করতে হবে। এ দিন দূরে নয় আমরা সকলেই এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পাব।’
সংলাপে ডিক্যাবের প্রেসিডেন্ট পান্থ রহমান, জেনারেল সেক্রেটারি একেএম মইনুদ্দিনও বক্তব্য দেন।
এর আগে গত শনিবার টিকা নিয়ে এক ভিডিওবার্তায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন রাশিয়া এবং চীনের টিকা আগে কেন আনলাম না। সে ক্ষেত্রে বলতে চাই, আমাদের দেশের যারা পণ্ডিতজন, বিজ্ঞানী, তারা বলেছিলেন আমাদের সবার মঙ্গলের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়া টিকা না আনতে। সে সময় রাশিয়া ও চীনের টিকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছিল না। সেই কারণে তখন আমরা আনিনি।
‘আর এখন যেহেতু ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি, তা ছাড়া চীনা টিকা এখন পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন মানুষ নিয়েছেন, ৬৩ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা নিয়েছেন, কারও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। তা ছাড়া রাশান স্পুৎনিক ভি-কে বিশ্বের নানা জার্নালে বলছে, ইট ইজ দ্য টপ ভ্যাকসিন, যা ৯৬ ভাগ কাজ করে। যদিও এর অনুমোদন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেই, তবু প্রধানমন্ত্রী বিশেষ ক্ষমতাবলে এগুলো আনার অনুমোদন দিয়েছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা আগে থেকেই চায়না ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে রেখেছি। ১২ তারিখে চীনের টিকার প্রথম চালান এখানে আসবে। পাঁচ লাখ ডোজ; গিফট হিসেবে।
‘তাই টিকা নিয়ে কারও চিন্তা করার কিছু নাই। কোনো রাজনীতি করারও কিছু নাই।’