হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা জানতে তদন্ত চলছে। তাকে এ বিষয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)।
রোববার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চান, মামুনুল হক গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয় তার পরিবারের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল। মামুনুল হকও জঙ্গিবাদে জড়িত কি না?
জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যেই ডিবি ও তেঁজগাও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মামুনুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তদন্তে মামুনুল হকের পরিবারের সঙ্গে উগ্রবাদীদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
‘তবে মামুনুল হকের সঙ্গে উগ্রবাদীদের যোগাযোগ বা তিনি জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। অন্যান্য বিষয়ে রিমান্ড চলায় আমরা তাকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পাইনি। তবে আমরা শিগগিরই তাকে হেফাজতে নিয়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’
মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের জেরে সহিংসতা হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জসহ আরও কয়েক জেলায়।
এসবের জের ধরে সরকারের সঙ্গে ব্যবধান বাড়ে হেফাজতের। এর মধ্যে গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হন মামুনুল। ওই নারীকে প্রথমে তিনি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও পরে জানা যায়, মিথ্যা বলেছেন মামুনুল। ওই নারী তার পরিচিত হলেও স্ত্রী নয়।
এ ঘটনার পর থেকে অনেকটা ব্যাকফুটে যায় হেফাজত। ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মামুনুলকে। তাকে গ্রেপ্তারের পর হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত ৩০ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসাটি মামুনুল হকের পরিবার দখল করার পর সেটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত করা হয়।
মামুনুলের এক দফা রিমান্ড শেষে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি মুফতি নিয়ামতউল্লাহ ১৫-২০ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। সেখান থেকে এসে জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরুর পর তার সঙ্গে মামুনুলের বোনের বিয়ে হয়। এই নিয়ামতউল্লার সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনের বন্ধুত্ব ছিল।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর নিয়ামতউল্লাহকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আজিজুল হক তখন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান আসমি হুজি নেতা মুফতি হান্নানেরও যাতায়াত ছিল ওই মাদ্রাসায়।
ডিসি হারুন আরও জানান, ২০০৫ সালের দিকে নিয়ামতউল্লার সঙ্গে মামুনুলও ৪০ দিন পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানকার একটি ধর্মীয় সংগঠনকে তারা মডেল হিসেবে গ্রহণ করে তা বাংলাদেশের ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেন। আর এসব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল মোহাম্মদপুরের দখল করা মাদ্রাসাটি।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, মাদ্রাসাটি দখলের পরই যে মাওলানা আবদুল মালেককে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বানানো হয়েছিল, তার ছেলে হাফেজ মাওলানা আবু তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি।