মাদারীপুরে যে স্পিডবোটটি দুর্ঘটনায় পড়ে ২৬ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে তার মালিক চান্দু মোল্লাকে শনিবার গভীররাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, অতিরিক্ত লাভের আশায় লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোট চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোটসহ চান্দুর মালিকানাধীন তিনটি স্পিডবোটের একটিরও বৈধ কাগজপত্র বা অনুমোদন নেই বলেও জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গত ৩ মে ভোরে ঘাটে নোঙর করে রাখা বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে শিমুলিয়া থেকে আসা একটি দ্রুতগতির স্পিডবোটের ধাক্কা লাগলে ঘটনাস্থলেই ২৬ জনের মৃত্যু হয়।
সেই দুর্ঘটনার পর ওই এলাকায় স্পিডবোট পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি ধরা পড়ে। জানা যায়, দুর্ঘটনায় পড়া নৌযানটির কোনো অনুমোদন ছিল না। চালকেরও লাইসেন্স ছিল না।
এই ঘটনায় ৪ মে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায় একটি মামলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কেরানীগঞ্জ তেঘড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি স্পিডবোটের মালিক চান মিয়া বা চান্দু মোল্লা বা চান্দুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় চান্দু মিয়া স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চান্দু এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, দুর্ঘটনার শিকার ওই স্পিডবোট ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিল। এ ছাড়া স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ঘাটতি ছিল।
‘গ্রেপ্তারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরও জেনেছি, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে তারা অবৈধভাবে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করতেন। ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট পারাপার করার বিষয়ে যাত্রীদেরও উৎসাহ ছিল।’
তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, আসামি চান মিয়া পাঁচ বছর ধরে স্পিডবোটের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের ব্যবসা করে আসছিলেন। তার তিনটি স্পিডবোটের কোনোটির অনুমোদন ছিল না। দুর্ঘটনার পরপরই আসামি চান্দু আত্মগোপনে চলে যান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, এ মামলায় চারজন আসামি। চালক প্রধান আসামি। তিনি পুলিশের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামলার বাকি দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমাদের অভিযান চলছে।
অবৈধভাবে যারা স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাওয়া ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে স্পিডবোড ব্যবসা পরিচালিত হয়। বিআইডব্লিটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, জেলা প্রশাসক, ঘাট ইজারাদার ও মালিক সমিতির সম্মানিত তত্ত্বাবধানে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়। কোনো অনুমোদনহীন বোট নদীতে যাত্রী পারাপার করলে অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনকে লুকিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করতেন। সাধারণ সময়ে তারা যাত্রী পারাপার করতে দেড়শ টাকা করে নিলেও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের সময় তারা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করছিলেন।
র্যাব জানায়, স্পিডবোটটিতে ২০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও এই দুর্ঘটনায় যাত্রী ছিলেন ৩২ জন।