পূর্বাচলে পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে গিয়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ১ হাজার ৪৪০ জনকে প্লট বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে রোববার সকালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অবশিষ্ট মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্তদের প্লট বরাদ্দপত্র দেয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় শহর গড়ে ওঠে। কিছু মানুষের হাসি, কিছু মানুষের কান্না। এটাই কিন্তু বাস্তবতা। পূর্বাচল যখন প্রথম শুরু হয় তখন একবার আমি ওখানে গিয়েছিলাম লঞ্চে করে। তখন ওয়াদা করেছিলাম যদি কখনো সুযোগ পাই কেউ বঞ্চিত থাকবে না।
‘কিছু প্লট সে সময় দেয়া হয়। কিন্তু অনেককেই তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আমি যতবারই সরকারে এসেছি ততবারই চেষ্টা করেছি, যাতে যারা বঞ্চিত অধিবাসী তারা যেন তাদের প্লটগুলো পায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শহর গড়ে তুলতে চাই। আমাদের দেশে যারা বিত্তশালী তারা প্লট কেনেন, ভালো ভালো দৃষ্টিনন্দন বাড়িঘর বানান। এই পূর্বাচল যখন হলো তখনও আমরা দেখেছি এমনকি গুলশান-বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকাও যাদের, তাদেরও পূর্বাচলে একটি প্লট না থাকলে নাকি ইজ্জত থাকে না। এমনও কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা আমি দেখেছি।
‘কিন্তু যাদের সত্যিকার প্রাপ্য আপনারা…আপনারা কিন্তু বঞ্চিত ছিলেন। কাজেই আমার সব সময় একটা প্রচেষ্টা ছিল কীভাবে আপনাদের এই বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব। আপনারা জমি দিয়েছেন, অথচ আপনারা প্লট পাবেন না, এটা হতে পারে না।’
বঞ্চিতদের প্লট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পূর্বাচলে নতুন কোনো প্রকল্প অনুমোদন না দেয়ার কথা জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমার কাছে একটা প্রস্তাব আসে এখানে একটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি টাওয়ার নির্মাণের। আমি কিন্তু সেটা অনুমোদন দিইনি।
‘আমি সেই ফাইলে লিখে দিয়েছিলাম আগে এখানকার যারা অধিবাসী তারা প্লট পাবে। তারপর আমি প্রকল্প অনুমোদন দেব। এর আগে কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেব না।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে আপনারা জানেন যে এই শহরটা গড়ে তোলার জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করার, ফ্ল্যাট নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল। আমি বলেছি ওগুলো সব বাদ দিতে হবে। আগে প্লট তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে আরও জমি নিতে হবে। কিন্তু যাদের একবার কথা দেয়া হয়েছে তাদের কথা রাখতে হবে। এর আগে আর কোনো প্রকল্প আমি অনুমোদন করব না পূর্বাচলে।
‘মরলে যেতে হবে সাড়ে তিন হাত জায়গায়’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের এত বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বাড়িঘর, প্লট তাদের আরও লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে কবরে সেই মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গায়। এই ধনসম্পদ কেউ সাথে নিয়ে যেতে পারবে না। এ কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায় আমি জানি না। আজ আপনাদের হাতে যে এগুলো তুলে দিতে পারলাম এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’
দেশে যেন কেউ গৃহহীন না থাকে, এর জন্য সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন ছিয়ানব্বই সালে সরকারে আসি আমার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প আমরা চালু রাখি। পাশাপাশি একেবারেই খুবই সাধারণ, একেবারে রাস্তার ওপর পড়ে থাকা, ফুটপাতে পড়ে থাকা গৃহহীন তাদের জন্য আমরা ঘর তৈরি করার আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিই। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় তিন লাখের ওপর পরিবারকে আমরা পুনর্বাসন করতে পেরেছি।
‘ছিয়ানব্বই সালে আমার লক্ষ্য ছিল একটি মানুষও কুঁড়েঘরে বাস করবে না। নিদেনপক্ষে একটা টিনের ঘর, একটা টিনের চালার নিচে যেন তাদের স্থান করে দিতে পারি, সে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। এবার আমরা এসে সেমি পাকা ঘরও করে দিচ্ছি। অর্থাৎ একটু মানুষের ঠাঁই করে দেয়া। এটা শুধু শহরকেন্দ্রিক না। একেবারে গ্রাম পর্যন্ত ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যন্ত আমরা করে দিচ্ছি।’
গ্রামেও যেন শহরের সব সুযোগসুবিধা যায় সে উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে শহরে বাস করার। এ জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি গ্রামে মানুষ যেন নাগরিক সুবিধা পায়, শহরের সুবিধা পায়। আমরা কিন্তু সেই ব্যবস্থাই করছি। সেভাবেই আমরা রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ তৈরি করা, অবকাঠামো তৈরি করা, ঘরবাড়ি তৈরি করা।
‘এ ছাড়া একদম গ্রাম পর্যায়েও যদি কেউ ফ্ল্যাটে থাকতে চায় আমরা পল্লি জনপদ নামে একটা প্রকল্প নিয়েছি। সেখানে তারা ফ্ল্যাটও কিন্তু পাবে এবং একই সাথে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাও করতে পারবে। সেভাবেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি।’
ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগ ও জেলাতেও পরিকল্পিত বাড়িঘর তৈরি করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।