বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সৈকত বাঁচাবে বালুভর্তি টিউব

  •    
  • ৯ মে, ২০২১ ১০:৪৩

তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে টিউব বসানোর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর বাস্তবায়ন হলে বর্ষা মৌসুমে সৈকত বালুক্ষয় থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বালুক্ষয় থেকে সৈকত রক্ষায় দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে ওভেন জিয়োটিউব।

পরীক্ষামূলকভাবে বালুভর্তি এ টিউব বসানো শুরু হয়েছে ভাঙনপ্রবণ কুয়াকাটা সৈকতের দেড় কিলোমিটার এলাকায়।

তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে টিউব বসানোর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর বাস্তবায়ন হলে বর্ষা মৌসুমে সৈকত বালুক্ষয় থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে অমাবশ্যা-পূর্নিমার জোর প্রভাবে বালুক্ষয়ে ধ্বংস হয় ‘সাগরকন্যা’ খ্যাত পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা।

বালুক্ষয়ের ফলে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সৈকতটির প্রস্থ জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে।

পর্যটকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি ও আন্দোলন-সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর নামমাত্র সৈকত রক্ষার অস্থায়ী চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, জোয়ারের তীব্রতায় সৈকত রক্ষার চেষ্টা ম্লান হয়ে যায়। সেদিকে খেয়াল রেখে এবার বিদেশ থেকে আমদানিকৃত জিয়োটিউব বসানো হচ্ছে সৈকতে।

কোথায় বসছে টিউব

পটুয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল রহমান জানান, সৈকতের মূল পয়েন্টের দুই পাশে দেড় কিলোমিটার এলাকায় বসানো হচ্ছে ওভেন আর নন ওভেন জিয়োটিউবগুলো।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সময় ধরা হয়েছিল জুন। তবে এরই মধ্যে কাজ প্রায় শেষের পথে।

রাশেদুল জানান, জিয়োটিউবের মধ্যে এক কিলোমিটার সাদা রঙের বা নন-ওভেন। এগুলো বাংলাদেশ তৈরি। বাকি ৫০০ মিটার বা আধা কিলোমিটারে বসানো হচ্ছে কালো রঙের ওভেন জিয়োটিউব, যেগুলো বিদেশি তৈরি।

তিনি জানান, নন-ওভেন টিউবের চেয়ে ওভেন টিউব বেশি টেকসই হওয়ায় বালুক্ষয় থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

এ কর্মকর্তা আরও জানান, জিয়োটিউবের বাইরে ও ভেতরের দিকে জিয়ো ব্যাগ স্থাপন করায় এবারের প্রতিরক্ষা বাঁধটি আগের চেয়ে টেকসই হবে। সৈকত রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

কুয়াকাটা সৈকতে ওভেন জিয়োটিউব স্থাপনে কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি: নিউজবাংলা

সম্প্রতি কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক নন ওভেন জিয়োটিউব স্থাপনের কাজ করছেন। ভাটার সময় শ্রমিকরা অনরবত কাজ করতে পারলেও জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ঝাপটায় তারা কাজ করা থেকে বিরত থাকেন।

কাজে ব্যস্ত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাডার সময়ে কাম করতে সুবিধা অয়। কিন্তু যহন জোয়ার আয় তহন লবণপানি ঢুইকা কামে সমস্যা অয়।

‘মুহূর্তের মধ্যে বস্তার (নন ওভেন জিয়োটিউব) উপরে বালু জমা অইয়া শক্ত অইয়া যায়। পরে হেগুলো আরেকখানে নেওয়া যায় না।’

পটুয়াখালী পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বালুক্ষয় থেকে কুয়াকাটা সৈকতকে রক্ষায় একটি স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের জন্য ডিপিপি বা খসড়া প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। সেটি চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী এখানে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরি করা হবে।’

তিনি আরও জানান, গত বছর যে জিয়োটিউব বসানো হয়েছিল, সেগুলো স্থানীয় লোকজন কিংবা পর্যটকরা নষ্ট করেছিলেন। কিন্তু ওভেন জিয়োটিউব এতই শক্ত ও মজবুত যে এগুলো যে কেউ ইচ্ছা করলেই নষ্ট করতে পারবে না। কারণ এগুলো কাটা-ছেঁড়া সম্ভব নয়।

তবে কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া।

জিয়োটিউবগুলোতে মোটা বালু দেয়ার কথা বলেছেন স্থানীয় অনেকে। ছবি: নিউজবাংলা

পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতবারের চাইতে এবারের টিউবগুলো দ্যাখতে ভালো মনে হয়। কিন্তু এসব টিউবে যদি লাল এবং মোটা বালু দিত তাইলে আরও ভালো হইত।’

এসব টিউবে স্থানীয় বালু দেয়ায় স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন স্থানীয় আরও অনেকে।

কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব শরীফ নিউজবাংলাকে জানান, ভাঙনের কবল থেকে সৈকতটি স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে না পারলে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণের আগ্রহ হারাবেন। পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। তাই যেভাবেই হোক সৈকতটিকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘শুনেছি গত বছরের চেয়ে এবারের ব্যাগগুলো নাকি খুব মজবুত। যদি তাই হয় তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ পৌর মেয়রের উচিত এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা।’

স্থানীয়দের বিরুদ্ধে দেশি জিয়োটিউব কেটে ফেলার অভিযোগ করেছেন পাউবোর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার স্বপন মৃধা।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় খুটা জাল ব্যবহারকারী কিংবা সৈকতে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকরা পরিকল্পিতভাবে দেশীয় তৈরি নন ওভেন জিয়োটিউবগুলো গত বছরের মতো এবারও কেটে নষ্ট করে ফেলছে। ফলে সেগুলো জোয়ারের পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।’

সরকারি সম্পত্তি এভাবে নষ্ট না করার আহ্বান জানান তিনি।

তবে লকডাউন থাকায় এ ব্যাপারে স্থানীয় জেলে আর মোটরসাইকেল চালকদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পাশাপাশি দূরত্বে দুটি করে জিয়োটিউব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মেয়র। ছবি: নিউজবাংলা

পাহারার আশ্বাস মেয়রের

জিয়োটিউবগুলো যাতে নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে কড়া নজরদারির আশ্বস দেন কুয়াকাটা পৌরসভা মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার।

তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে দিনে-রাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হবে। তারপরও সরকারি এই সম্পত্তি আর কাউকে নষ্ট করতে দেয়া হবে না।’

স্থায়িত্ব বাড়াতে তিনি কাছাকাছি দূরত্বে দুটি করে টিউব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

তার মতে, দুটি টিউব বসানো হলে সাগরের উত্তাল ঢেউ থেকে গোটা পয়েন্টটা বর্ষা মৌসুমে রক্ষা পাবে।

২০১৯ সালে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে একই স্থানে দেশীয় তৈরি জিয়োটিউব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সেটি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয়দের দায়ী করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর