বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৫০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দাবি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের

  •    
  • ৮ মে, ২০২১ ১২:৩৩

লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মালিকদের যানবাহন মেরামত, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঈদ বোনাস ইত্যাদি দেয়ার জন্য নামমাত্র সুদে ও সহজ শর্তে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা চেয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার গণপরিবহন খুলে দেয়া এবং ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনাসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের তিন সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার সকালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরে।

তাদের দাবিগুলো হলো:

০১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব গণপরিবহন এবং স্বাভাবিক মালামাল নিয়ে পণ্য পরিবহন চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।

০২. (ক). লকডাউনের কারণে কর্মহীন সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আসন্ন ঈদের পূর্বে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে।

(খ). লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মালিকদের যানবাহন মেরামত, কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও ঈদ বোনাস ইত্যাদি দেয়ার জন্য নামমাত্র সুদে ও সহজ শর্তে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিতে হবে।

০৩. সারা দেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের ঈদের আগে ও পরে ১০ টাকায় ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

০৪. গণপরিবহন ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগের বিপরীতে সমস্ত ব্যাংক ঋণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফ ও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তি স্থগিত এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে নিয়ে ক্লাসিফাইড ঋণ আনক্লাসিফাইড করতে হবে।

০৫. লকডাউনে বন্ধ থাকা গাড়ির ট্যাক্স-টোকেন, রুট পারমিট ফি, আয়করসহ সব ফি, কর ও জরিমানা মওকুফ করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাগজপত্র হালনাগাদ করার সুযোগ দিতে হবে।

দাবিগুলো পূরণ না হলে ঈদের দিন সারা দেশের মালিক ও শ্রমিকরা নিজ নিজ এলাকায় বাস ও ট্রাক টার্মিনালে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। ছবি: নিউজবাংলা

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সংসদ সদস্য শাজাহান খান।

এতে বলা হয়, ৬ মে থেকে লকডাউন শিথিল করে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রেখে মহানগর ও জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন পরিচালনার জন্য যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।

এতে বলা হয়, ‘করোনার হাত থেকে জীবন রক্ষার জন্য সরকার লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিকরা লকডাউনের বিরোধী নই। আমরাও চাই মানুষের জীবনরক্ষার্থে কঠোরভাবে লকডাউন পালিত হোক। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকার কথা। তারপরও মিছিল-মিটিং সমাবেশ হচ্ছে; গার্মেন্টস কারখানা চলছে, শপিং মল, কাঁচা বাজার চলছে, দোকানপাট, হাটবাজার খোলা, অফিস-আদালত আংশিক খোলা।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘গণপরিবহন বাস-কোচ, মিনিবাস বন্ধ থাকলেও রিকশা ভ্যান, নছিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, বেবি ট্যাক্সি, ইজিবাইক, কার, মাইক্রোবাস, হিউম্যান হলার, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও বহু ছোট ছোট ট্রাক ও পিকআপে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে শতভাগ। সবকিছু খোলা রেখে শুধু দূরপাল্লার বাস কোচ বন্ধ রেখে কতটা সংক্রমণ রোধ করা যাবে আমাদের বিবেচনায় তা আসে না।’

লকডাউনের পণ্য পরিবহনও স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ ব্যাপারে বলা হয়, পণ্য পরিবহনও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। গুটি কয়েক পণ্য পরিবহন যা চলছে তা আবার চাঁদাবাজ ও পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছে। ভোলার চরফ্যাশনসহ দেশের কয়েকটি পৌরসভায় টোলের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে পণ্য পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

নেতারা জানান, সরকার মহানগর ও জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালুর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। শুধু দূরপাল্লার যানবাহন চলবে না। এই সিদ্ধান্তটি কতটা বাস্তবমুখী তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ, দূরপাল্লাগামী যাত্রীরা কষ্ট করে টাকা বেশি খরচ করে শরীরের ওপর চাপ নিয়ে, করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাচ্ছে এটাই স্বাভাবিক।

শুধু দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রেখে করোনা সংক্রমণ কমানোর উদ্দেশ্য সফল হবে না বলেও মন্তব্য করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন এক পরিবহনশ্রমিক। ছবি: সাইফুল ইসলাম

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কেউ কী খবর রেখেছেন সড়ক পরিবহনশ্রমিকদের ঘরে চাল আছে কী নাই। তাদের চুলা জ্বলে কী জ্বলে না, তাদের পরিবার-সন্তানরা এক বেলা ডাল-ভাত খেল কি না? এ খবর কেউ রাখেনি। না সরকার না সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তি বা কোনো সমাজসেবা সংগঠন। যৎসামান্য যা দিয়েছে, তা শ্রমিক ও মালিক সংগঠন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মালিকরা সহায়তা দিয়েছেন। তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

নেতারা জানান, সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দ শ্রমিকদের জীবনে নিরানন্দ বয়ে এনেছে। শ্রমিকের সন্তানদের একটু সেমাই এক টুকরা মাংস দিতে পারবে না, এ যন্ত্রণা কোনো শ্রমিক পিতা সহ্য করতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সড়ক পরিবহন মালিকদের অবস্থাও ভালো নয়। দেশের তিন লক্ষাধিক মালিক যাদের অধিকংশই অল্প পুঁজির। গাড়ি চালাতে না পেরে তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে সুদ বাড়ছে সরকারি ট্যাক্স ফি ইত্যাদি দিতে পারছেন না। সুদের বোঝা বৃদ্ধি পাওয়ায় লিজিং কোম্পানি বহু গাড়ি বাজেয়াপ্ত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকার ২০২০ সালে করোনার সময় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের প্রণোদনা দিয়েছিল। কিন্তু সড়ক পরিবহন মালিকদের প্রণোদনা দেয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু রায়হান, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষসহ আরও অনেকে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। শুরুতে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও পরে মহানগরগুলোতে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।

শেষ দিকে এসে সময় বেঁধে দিয়ে দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখারও সিদ্ধান্ত আসে। পরে সরকার আরও দুই দিনের জন্য বিধিনিষেধের সময় বাড়ায়।

বাস টার্মিনালগুলোতে পড়ে আছে দূরপাল্লার বাস। ছবি: নিউজবাংলা

কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল কঠোর বিধিনিষেধসহ লকডাউন আরোপ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ায় সরকার।

কঠোর লকডাউন নিশ্চিতে আরোপ করা হয় ১৩ দফা বিধিনিষেধ। এর মধ্যে শপিং মল, দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও মানুষের জীবন-জীবিকা বিবেচনায় লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

চলমান লকডাউনের মধ্যে ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিং মল আরও বেশি সময় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এর মধ্যে লকডাউনের মেয়াদ আরও দুই দফা বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করেছে সরকার। অর্থাৎ এবারের ঈদুল ফিতর কাটছে বিধিনিষেধের মধ্যেই।

তবে প্রতি জেলার অভ্যন্তরে বাসসহ গণপরিহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার, যা চালু হয় গত বৃহস্পতিবার থেকে।

এ বিভাগের আরো খবর