সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। নব্বই দশকে জামালপুর জেলার সাপ্তাহিক পত্রিকা ঝিনাই এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করে পান পরিচিতি। পাশাপাশি কাজ করেছেন জাতীয় দৈনিক ও সংবাদভিত্তিক টেলিভিশনে।
বর্তমানে জামালপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন দৈনিক ভোরের কাগজ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে। তবে ৩৮ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের ইতি টানতে হচ্ছে তাকে। হঠাৎ ক্যান্সার ধরা পড়েছে শরীরে। চিকিৎসা নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে।
দুলাল হোসাইনের মেয়ে সুলতানা জান্নাত স্বপ্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি গরিবদের সাংবাদিক হিসেবে বেশি পরিচিত।
‘আমরা আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল নই। তবে যতটুকু পারি বাবার চিকিৎসা করাব। তবে বাবার পেশার সুবাদে অনেক দেখেছি। মফস্বল সাংবাদিকদের শেষ জীবনটা খুবই কষ্টের হয়। তারা সারাজীবন কাজ করে যান আর শেষে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। বাবার অনেক সহকর্মী এভাবে মারা গেছেন।’
দীর্ঘ দুই বছর কিডনিতে জটিল রোগে ভুগছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের জামালপুর প্রতিনিধি এবিএম আমিনুল ইসলাম লিটন। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যান। সেখানেই গত ২৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। অবস্থার অবনতির পর তাকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। গত ১ মে মারা যান তিনি।
জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শোয়েব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাংবাদিক লিটনের মৃত্যু একটি অপূরণীয় ক্ষতি। বিভিন্ন জটিলতার কারণে তার মরদেহ এখনও ভারতেই আছে। তার মরদেহ আনার সকল ব্যবস্থা করছে ডেইলি স্টার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সারাজীবন কষ্ট করে দেশ ও দশের জন্য কাজ করি আর জীবনের শেষ সময়ও কষ্ট করেই পার করি। মফস্বল সাংবাদিকদের জীবন এমনই হয়। বেঁচে থাকতেও কষ্ট, মৃত্যুর পরও কষ্ট।’
দীর্ঘ কয়েক বছর নানান জটিল রোগে ভুগছিলেন একুশে টেলিভিশনের জামালপুর প্রতিনিধি এবং জামালপুর প্রেসক্লাবের সদস্য আরিফ মাহমুদ। গত ৩ এপ্রিল শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া পর মারা যান তিনি। বয়স হয়েছিল সবে ৪৫।
২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল হৃদরোগে মারা যান জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সেই সময়ের সভাপতি ও এনটিভির প্রতিনিধি শফিক জামান লেবু। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৯ জুলাই মারা যান এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি আব্দুল জলিল। তিনিও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা করাতে পারেননি।
নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক বছর ধরে চিকিৎসাধীন জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সাংবাদিক লুৎফর রহমান, বিটিভির সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল। অসুস্থ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন এবং সৈয়দ শওকত জামানও।
জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই জেলার কোনো সাংবাদিক বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যাচ্ছে না। সবাই হঠাৎ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। আসলে মফস্বলের সাংবাদিকরা অমানুষিক পরিশ্রম করেন। তাদের খাওয়াসহ কোনো কিছুর রুটিন থাকে না। এর জন্য তারা কম বয়সে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এর সবই হয় শুধু মাত্র সাংবাদিকতার জন্য। মফস্বলের সাংবাদিকরা সারাজীবন দেশের কল্যাণে কষ্ট করেন এবং শেষ জীবনটাও তাদের অনেক কষ্টে যায়।’
জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা বলেন, ‘মফস্বলের সাংবাদিকরা প্রায় সবাই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য কিছু সরকারি অনুদান পাওয়া গেলেও সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। আমরা নানা জায়গা থেকে টাকা নিয়ে তাদেরকে সাহায্যের চেষ্টা করি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি শুধু মাত্র সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য একটি সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা যেত’- বলেন সাংবাদিক হাফিজ।