বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৩৩৩ নম্বরে খাদ্য চেয়ে ফোন, পাচ্ছেন বাড়িও

  •    
  • ৭ মে, ২০২১ ২০:০৮

৩৩৩ নম্বরে কল করলেই সহায়তা মিলবে কি না এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। তবে বরিশাল সদরে যারা ফোন করেছেন, যাচাই বাছাই করে তাদের সবাইকেই খাদ্য দেয়া হয়েছে। এদের একজনকে দেয়া হচ্ছে বাড়িও। তিনি থাকেন একটি কুঁড়ে ঘরে। সেটির অবস্থা ভালো নয় মোটেও। তার দুর্দশা দেখে ইউএনও এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

করোনাকালে ৩৩৩ নম্বরে কল দিলে ঘরে পৌঁছে যাবে খাবার। এটা জানতেন বরিশালের কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বিল্ববাড়ি গ্রামের লতা আক্তার। তিনি পেয়েছেনও তা। কিন্তু বাড়তি যেটা পেয়েছেন, সেটা অবিশ্বাস্য ঠেকছে তার কাছে। বলতে গিয়ে আনন্দে চোখে পানিও চলে এসেছে।

মা ও বোনকে নিয়ে একটি কুড়ে ঘরে বসবাস করেন লতা। তার জন্য খাদ্য দিয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবাসস্থল দেখে তাকে বিনা পয়সায় সরকারির বাড়ি বরাদ্দ দেয়ার কথা জানিয়ে এসেছেন।

লতা নিউজবাংলাকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দর্জির কাজ করে সংসার চলে। তয় লকডাউনের কারণে কাজবাজ তেমন নাই। খুব সমস্যার মধ্যে আছি। একবেলা খাওনও ঠিকমত খাইতে পারি না। আব্বায় মইরা গেছে। আমার স্বামীর লগেও তালাক হইছে আমার। এহন এই পরিবার আমার চালান লাগে। নিজের জমি নাই, ঘর নাই। মাইনসের দয়ার উপরে চলি। ভাবি নাই যে প্রধানমন্ত্রী মোগো লইগ্গা খাওন পাঠাইবে। মোগো মত গরিবের কথা হেগো পর্যন্ত যায় না জানতাম। কিন্তু ভুল ভাঙছে। ২/৩ দিন আগে ফোন দিছি অসহায় হইয়া। আর মোগো কথা চিন্তা কইরা খাওনও পাঠাইন্না হইছে।’

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে যাদের সহায়তা করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের কথা শুনে তাকে জমিসহ ঘর দেয়ার কথা বলেছি। আমাদের সকল প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়েছে, ১০/১৫ দিনের মধ্যে তাদের ঘর দেয়া হবে বলে জানিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছি।’

৩৩৩ নম্বরে কল করলেই সহায়তা মিলবে কি না এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। তবে বরিশাল সদরে যারা ফোন করেছেন, যাচাই বাছাই করে তাদের সবাইকেই খাদ্য দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও মনিবুর।

‘মনে করছি পামু না, কইতে গেলে লটারির মতো কলডা দিছি’

করোনাকালে খাদ্য নিয়ে সংকটে থাকা মানুষদেরকে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

এই তথ্য জেনেছেন বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের তিলক গ্রামের বাসিন্দা গৃহিনী নাসরিন আক্তারও। তবে তার মনে বিশ্বাস হয়নি এভাবে সহায়তা মিলবে।

সহায়তা সত্যি সত্যি মিলবে ভাবেননি নাসরিক আক্তার। তবে খাদ্য পেয়ে ভুল ভেঙেছে তার

মনে সংশয় নিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার ফোন করেন এই নম্বরে। আর রাতে পেয়ে যান খাবার। ইউএনও নিজে গিয়ে দিয়ে আসেন খাদ্য।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, 'করোনার মধ্যে স্বামী চাকরি হারাইয়া ঢাকা দিয়া বরিশালে আওয়ার পর হইতেই খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। কোনোহান দিয়া কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাই নাই। এমন অবস্থা কারও ধারে চাইতেও পারি নাই লজ্জায়।

‘পরে এক প্রতিবেশী কইল ৩৩৩ তে কল কইরা সমস্যার কথা জানাইতে। হেই অনুযায়ী মঙ্গলবার কল দিছিলাম। বৃহস্পতিবার বিকালে ফোন দিয়া বাসার ঠিকানা জিগাইছে। ইফতারের পর ৯টার দিকে ইউএনও সাহেব নিজে গোপনে আইয়া আমাগো সহায়তা দিয়া গেছে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, চিড়াসহ অনেক কিছু দেছে। কয়েকদিন পেট ভইরা খাইতে পারমু মোগো প্রধানমন্ত্রীর দয়ায়। আল্লাহ হেগো ভালো রাহুক।'

তিনি বলেন, ‘আমার তিন মাইয়া আর বেকার স্বামী লইয়া অনেক সমস্যার মধ্যেই ছিলাম। ৩৩৩ তে কল দেয়ার সময় মনে করছি পামু না। কইতে গেলে লটারির মত কলটা দিছি। কিন্তু সত্যিই যে পামু হেয়া কল্পনায়ও ভাবিনাই।’

রাতে সহায়তা কেন?

৩৩৩ নম্বরে যখনই মানুষ ফোন দেয় না কেন, বরিশালে সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে রাতে। এর কারণ, সরেজমিনে যাচাইবাছাই।

ইউএনও ‍মুনিবুর বলেন, ‘আমরা রাতে বাসায় গিয়ে দেয়ার কারণ যাচাই বাছাই তো রয়েছেই। যাদের দেয়া হচ্ছে তাদের অসহায়ত্বের কথা শুনে আরও কিছু সহায়তা করা যায় কি না সেই বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে।’

সহায়তা পাওয়া ছাড়াও এই সংবেদনশীলতায় আপ্লুত নাসরিন। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি মোগো মানসম্মানের কথা চিন্তা ইউএনও সাহেব প্রধানমন্ত্রীর উপহার অনেক পথ হাইটা বাসায় রাইতে দিয়া গেছে, যাতে পাড়া প্রতিবেশী কেউ টের না পায়। এটায় মোরা অনেক খুশি হইছি।’

কল পেয়ে খাবার নিয়ে ইউএনও যাচ্ছেন রাতে। এর কারণ, যাচাইবাছাই ছাড়াও সহায়তা প্রত্যাশীর সম্মান রক্ষা

নাসরিন আক্তারের মত একই ইউনিয়নের কলস গ্রামের বাসিন্দা দুর্ঘটনায় পা হারানো দিনমজুর আলমগীরও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার। তাকেও রাতে তার বাড়ি গিয়ে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান উপহার পৌঁছে দেন।

ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, ‘৩৩৩ এ কলের সর্বপ্রথম ম্যাসেজ ২৬ এপ্রিল। তবে সে সময় বরাদ্দ না থাকায় দেয়া সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাঘুরে ৩৩৩ এ কল দিয়ে সহায়তা চাওয়া ১৫ জনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার আরও পাঁচ জনকে দেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘মূলত যারা সহায়তা চাচ্ছে তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই নিন্ম মধ্যবিত্ত। ফোন আসলে সেই অনুযায়ী সবাইকে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর