হাজারও মুসল্লির উপস্থিতিতে বায়তুল মোকাররমে আদায় হলো পবিত্র জুমাতুলবিদা। রমজান মাসের শেষ জুমার নামাজের আগে খুতবায় এবং নামাজ শেষে দোয়ায় উঠে আসে করোনাভাইরাস মহামারি প্রসঙ্গ। ভয়াল থাবা থেকে পরিত্রাণ পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুতি জানান সবাই।
জুমাতুলবিদার নামাজ শুরুর অনেক আগেই হাজার হাজার মুসল্লি বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। করোনার কারণে নানা বিধিনিষেধ থাকলেও প্রতিটি তলা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
মসজিদের বাইরেও হাজার খানেক মুসল্লিকে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করলেও অন্যান্য জায়গায় মানুষের চাপে দূরত্ব মানা সম্ভব হয়নি। যদিও মসজিদের মাইকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
নামাজ শুরু হয় ১টা ৪০ মিনিটে। ১টার দিকেই পূর্ণ হয়ে যায় মসজিদের ভেতরের অংশ। খুতবা শুরুর আগে মুসল্লিরা মগ্ন হয়ে পড়েন নফল নামাজ ও জিকির আসগারে।
জুমার আজানের পর জাতীয় মসজিদের খতিব মুসল্লিদের উদ্দেশে বিশেষ খুতবায় বলেন, ‘রমজান মাস হচ্ছে সব মাসের চেয়ে উত্তম মাস। এ মাসে মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাদের জন্য রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের দ্বার উন্মোচন করে দেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার এটাই উত্তম সময়।’
জুমাতুলবিদার নামাজ পড়িয়েছেন মুফতি মিজানুর রহমান। নামাজ শেষের পর মোনাজাতে তৈরি হয় আবেগঘন মুহূর্ত। ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মসজিদ প্রাঙ্গণ।
মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়। মুসল্লিদের অনেকেই আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের সব মানুষের সুরক্ষার জন্য করা হয় বিশেষ দোয়া।
মোনাজাতে খতিব বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে এই মহা বিপদ করোনা থেকে আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করুন। সকল মুসলিমকে রক্ষা করুন। পৃথিবীর সকল মানুষকে রক্ষা করুন। আর যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সুস্থ করে দিন।
‘আল্লাহ যারা হাত তুলেছে তাদের যে কারোর উছিলায় তুমি এই সংকট থেকে আমাদের মুক্তি দাও। আল্লাহ এই রমজান যদি আমাদের কারোর জন্য শেষ রমজান হয়ে থাকে, তাহলে তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।’
ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জুমাতুলবিদার নামাজ আদায় করতে দলবেঁধে মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররমে ছুটে আসেন। আজিমপুর থেকে আসা ওবায়দুল্লাহ হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোজায় শেষ শুক্রবার আমি চেষ্টা করি বায়তুল মোকাররমে এসে নামাজ পড়তে। কোনোবার সম্ভব হয়, আবার কোনোবার সম্ভব হয় না। এবার আসতে পেরে ভালো লাগছে।’
শত বাধা উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জ থেকে এখানে নামাজ পড়তে এসেছেন হাফেজ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু সোয়াবের জন্য এখানে নামাজ পড়তে এসেছি। অনেক মানুষ এখানে নামাজ পড়েন, কার দোয়া কখন কবুল হয় কে জানে, তাই এসেছি।’
মোহাম্মদপুর থেকে নামাজ পড়তে আসা তরিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এইদিকে একটু কাজ ছিল, শেষ করতে দেরি হয়ে গেছে, তাই এখানে নামাজ পড়ছি। ভালোই লাগছে, এত মানুষ এখানে নামাজ পড়ছেন। বেশি নামাজ পড়লে দোয়া কখন কবুল হয়।’