চলমান লকডাউনে আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঈদ উপলক্ষে বরাবরের মতো ঘরমুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে ঘাটগুলোতে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকেই এই পরিস্থিতি দেখা যায় প্রতিটি ঘাটে। যত দূর চোখ যায়, পণ্যবাহী গাড়ি, যাত্রীবাহী প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ।
এতে বলা হয়, সব পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেলপথ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
এরপর দুই দফা বাড়িয়ে লকডাউন ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়।
বুধবার নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ৫ মের পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। উল্লেখ্য, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে।
এই প্রজ্ঞাপনে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার পাটুরিয়া ফেরিঘাটে শুক্রবার সকালে দেখা যায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। অধিকাংশ যাত্রীই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে জেলার মধ্যে গণপরিবহন চালু হওয়ার পর থেকেই ঘাটে বাড়িমুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। তার উপর শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় চাপ বেশি।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরির মধ্যে তিনটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তিন শতাধিক যানবাহন পাটুরিয়া ঘাটে পারের অপেক্ষায় আছে।
দুপুরের মধ্যেই ঘাটের চাপ কমে যাবে বলে জানান ডিজিএম জিল্লুর রহমান।
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সব সময়ই যাত্রীদের মাস্ক পরতে ও সামাজিক দূরত্ব মানতে বলি। কিন্তু তারা তো আমাদের কথায় গুরুত্ব দেয় না।’
একই অবস্থা দেখা যায় দৌলতদিয়া ঘাটে। প্রতিটি ফেরি যাত্রীবোঝাই। ফেরি থেকে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপে দৌলতদিয়া থেকে চলছে ১৬টি ফেরিবিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক ফিরোজ শেখ জানান, এই ঘাট থেকে দিনে ছয়টি ফেরি চলাচল করছিল। তবে শুক্রবার চাপ অনেক বেশি থাকায় ১৬টি ফেরিই চালু করে দেয়া হয়েছে।
লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে বন্ধ আছে স্পিডবোট। অবৈধভাবে কিছুদিন স্পিডবোট চলাচল করলেও সোমবার স্পিডবোট ডুবে ২৬ জনের মৃত্যুর পর সেটিও এখন বন্ধ।
শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায়, ফেরিগুলোতে যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীরাও পার হচ্ছেন।
এই ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাফায়াত আহমেদ জানান, সকাল থেকেই ঘাটে দক্ষিণবঙ্গগামী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। নদী পার হওয়ার জন্য ঘাটে প্রায় ৮০০ যানবাহন অপেক্ষা করছে।
১৩টি ফেরি চলাচল করলেও যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় প্রতিটিতে অধিকসংখ্যক যাত্রী উঠে পড়েছেন। এ কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় কম গাড়ি ও বেশি যাত্রী নিয়ে ফেরিগুলো চলাচল করছে।
বাংলাবাজার ঘাটে শুক্রবার ভোর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্সের বেশ চাপ।
বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক (৩ নম্বর ঘাট প্রধান) কামাল হোসেন বলেন, ‘গত যেকোনো দিনের চেয়ে আজ (শুক্রবার) গাড়ির চাপ বেশি। তবে ঘাটে বাংলাবাজার থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই।’