করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যেতে সরকারের কাছে করা আবেদনটি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শামীম এস্কান্দারের করা আবেদনটি বুধবার রাতেই স্বরাষ্ট্র থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নথিটি এখনও হাতে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার সচিব সাহেবের কাছে এসেছে। তারা পর্যালোচনা করছেন। আমার কাছে আসুক।’
পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, আমার অপিনিয়ন (মতামত) দিতে হবে। দেখা যাক। আসুক।’
বিএনপি নেত্রীকে বাইরে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনি দিক বিবেচনায় নিতে হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আইনের দিকটা বড় কথা না। এখানে আইনের কিছু নেই।’
তাহলে বিষয়টি কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘কথা হচ্ছে, অবস্থার প্রেক্ষিতে (খালেদা জিয়াকে) যে শর্ত দেয়া হয়েছিল, সেই শর্ত শিথিল করা হবে কী, হবে না; এটাই হচ্ছে আসল বিষয়।’
এ ক্ষেত্রে সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সবসময় তো মানবিক দিক বিবেচনা করা হয়েছে।
‘(খালেদা জিয়ার) উনার যে সাজা সেটাও তো ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা মোতাবেক স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। সেটাও তো মানবিক দিক দেখে দেয়া হয়েছে।’
আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নথিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠাবে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি আনিসুল।
তিনি বলেন, ‘এটুকু আমি বলতে পারি, বিষয়টার গুরুত্ব বুঝে যত শিগগিরই নিষ্পত্তি করা উচিত, সেটা আমি করব।’
প্রস্তুত বিএনপি
সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেলেই উন্নত চিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে প্রস্তুত রয়েছে বিএনপি। বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার সাড়া দিলেই বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় খালেদা জিয়াকে চার্টার্ড বিমানে করে সিঙ্গাপুর হয়ে লন্ডন নেয়া হবে। সঙ্গে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল এবং পরিবারের সদস্যরা থাকবেন।
খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর তাকে বিদেশ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই এসে জানিয়েছেন, তিনি (খালেদা) হসপিটালে ভর্তি আছেন। তাকে বিদেশ নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কারণ আমাদের দেশের ডাক্তাররা এই ধরনের অভিমত দিচ্ছে। আমরা যদিও ডাক্তারদের কাছ থেকে শুনি নাই।’
বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন এর মধ্যে অনেক কিছু জড়িত আছে। বিদেশ যেতে হলে কোর্টের কোনো ইয়ে (অনুমতি) লাগবে কি না সেটার ব্যাপার আছে। সে জন্য আমরা আইনমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে (আবেদন) পাঠিয়ে দিয়েছি।
‘তার কমেন্টটা আসুক। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই আমরা পজিটিভলি দেখছি। পজিটিভলি দেখছি বলেই তাকে (খালেদা জিয়া) দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তার চিকিৎসার সুবিধার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
গত ২৭ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।