করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ কমাতে সরকারঘোষিত লকডাউনে রাজধানীতে টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে বাস চলাচল।
মালিক সমিতি নির্ধারিত ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকায় বাস চলতে দেখা গেছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভোর থেকে রাজধানীসহ সব জেলায় বাস চালুর ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ বাসই চলেছে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে। তবে কিছু কিছু বাসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
সড়কে বাসের সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কম দেখা গেছে। তারপরও মোটের ওপর পরিবহন বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে রাজধানীতে স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী মানুষের চাপ কম থাকায় সকালে গণপরিবহনে ওঠার যে হুড়াহুড়ি থাকে, সেটা অনেকটাই কম দেখা গেছে।
বাস চলাচল নিয়ে কথা হয় মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রীগামী তরঙ্গ প্লাসের চালক মোহাম্মদ মিঠুর সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনেক স্টাফ লকডাউনের কারণে দেশে চলে গেছিল। ওরা টাকার অভাবে এখনও ঢাকায় আসতে পারে নাই।
‘ঈদের পরে আসবে। এই কারণে আমাদের তরঙ্গ প্লাসের ছয়-সাত গাড়ি কম চলতাছে।’
বছিলা থেকে আব্দুল্লাহপুরগামী পরিস্থান পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাগো কী আর ঈদ আছে? আমরা দিন আনি দিন খাই। লকডাউনে কাজ না থাকায় দেনায় পড়ছি।
‘এই কয়দিন গাড়ি চালাইয়া যেইহানে দেনাই শোধ করতে পারমু না, সেইহানে ঈদের কেনাকাটার ক্যামনে করমু?
ঘাটারচর থেকে চিটাগাং রোডগামী রজনীগন্ধা পরিবহনের হেলপার সেলিম জানান, ভাড়া গত লকডাউনের মতো ৬০ শতাংশ বেশি। কিন্তু অনেক জায়গায় ৫০ শতাংশ নিতে হয়।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে সেলিম বলেন, ‘ধরেন মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগে আগে একজনের ভাড়া আছিল ১০ টাকা। পাশাপাশি দুই সিটে ভাড়া উঠত ২০ টাকা। কিন্তু এখন দুই সিটে একজন বসছে। ভাড়া দিচ্ছে ১৫ টাকা। এখানে মালিকের লস ৫ টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘মালিক আমাদের সব সময় মাক্স (মাস্ক) পরে থাকতে বলে। আর মাক্স না পরলে সে যাত্রী নিতে নিষেধ করছে।’
পরিবহনকর্মীদের মুখে মাস্ক, বাসে স্যাভলন
রাজধানীর সড়কে চলাচলরত বেশির ভাগ বাসের চালক, হেলপারদের প্রায় সবাইকে মাস্ক পরতে দেখা গেছে। কিছু কিছু পরিবহনে বোতলে স্যাভলন রেখে যাত্রীদের হাত স্যানিটাইজ করতে দেখা গেছে।
কারণ হিসেবে বাসের কর্মীরা বলছেন, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নির্দেশের কারণে এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বুধবার পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা এসেছিল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা। অর্থাৎ দুই সিটে একজন করে বসতে হবে।
অন্য নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী পরিবহন না করা, পরিবহন সমিতি বা কোম্পানির নামে কোনো জিপি (গেট পাস) আদায় না করা।
তবে এসব নির্দেশনা প্রথম দুই-এক দিন মানার পর আগের মতোই হয়ে যায় বলে জানান সাব্বির আহম্মেদ নামের এক যাত্রী।
করোনাভাইরাসের বিস্তার কমাতে গত ৫ এপ্রিল দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি হয়। আর ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত শুরু হয় ‘কঠোর’ লকডাউন। তখন থেকেই সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ। পরে সে লকডাউন আরও ২ দফা বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়।
চলমান বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এতে বলা হয়, আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ৫ মের পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে।